ভারতে ‘পূর্ণ জয়’ চান কৃষকেরা
ভারতে কৃষকদের দিল্লি অবরোধের বর্ষপূর্তি উদ্যাপনের দিন আন্দোলনরত কৃষকনেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, পূর্ণাঙ্গ জয় না আসা পর্যন্ত তাঁরা ঘরে ফিরছেন না। পূর্ণাঙ্গ জয় বলতে কী বোঝায়, কৃষকনেতারা তা স্পষ্ট করেই বলেছেন। শুক্রবারের মধ্যে কৃষকদের চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে হবে। তা না দেখালে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি তাঁরা শনিবার বৈঠক করে ঠিক করবেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর দেশের ছোট-মাঝারি-বড় পাঁচ শতাধিক কৃষক সংগঠনের সম্মিলিত সংগঠন ‘সংযুক্ত কিষান মোর্চা’ (এসকেএম) দিল্লির সীমান্তবর্তী তিন এলাকায় অবরোধ শুরু করেছিল। সেই থেকে সিংঘু, টিকরি ও গাজিপুর সীমান্তে এক বছর ধরে হাজার হাজার কৃষক পুরুষ-নারী অবস্থান করছেন। শুক্রবার সেই অবরোধের এক বছর পূর্ণ হলো। সেই উপলক্ষে তিন সীমান্তে উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন রাজ্য থেকে বহু কৃষক। সেখানেই তাঁরা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন।
কৃষকনেতারা বলেন, তাঁরা প্রাথমিক জয় আদায় করেছেন। সরকার তিন ‘কালাকানুন’ রদ করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এই আংশিক জয়ে কৃষকদের দুর্দশা ঘুচবে না। পূর্ণাঙ্গ জয়ের জন্য তাঁরা প্রস্তুত।
পূর্ণাঙ্গ জয় বলতে কৃষকনেতারা কী মনে করছেন, তিন সীমান্ত জমায়েতে তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে। ফসলের ন্যায্য দাম পেতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আইনি রক্ষাকবচ প্রধান দাবি। এ ছাড়া রয়েছে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ আইন বাতিল, ‘কৃষক হত্যাকারী’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত, নিহত সাত শতাধিক ‘শহীদ কৃষক’ পরিবারের ঋণ মওকুফ ও ফসলের গোড়া জ্বালানোর অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রদ।
গাজিপুর সীমান্তে পশ্চিম উত্তর প্রদেশের কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘করোনা ও কৃষি আইন একই সঙ্গে হানা দিয়েছিল। আমরা করোনাকে রুখেছি, তিন আইনও বাতিল করেছি। এবার অন্য দাবি আদায়ের অপেক্ষা।’ মোর্চার বিভিন্ন নেতার উপস্থিতিতে তিন সীমান্তে স্লোগান ওঠে, ‘এক লড়াই জিতা হ্যায়, অব যোগী সরকার কি বারি হ্যায়’। অর্থাৎ তিন আইন বাতিলের মতো এবার উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারকে সরাতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।
বস্তুত উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের আগে কৃষক আন্দোলনের মোকাবিলাই এখন কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের নেতারা বিজেপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে প্রতিদিন জানাচ্ছেন, সাহারানপুর থেকে আগ্রা পর্যন্ত কোনো জেলার গ্রামাঞ্চলে প্রচারের জন্য তাঁরা ঢুকতে পারছেন না। তিন আইন বাতিল সত্ত্বেও কৃষক ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে কৃষকনেতারা বাকি দাবি আদায়ে সংঘবদ্ধ হচ্ছেন।
এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না। নয়ডার জেওয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এই এলাকার অর্থনীতি বদলে যাওয়ার ওপর প্রধানমন্ত্রী জোর দেন। কৃষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ফলে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। এরই পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ধর্মীয় বিভাজনের দিকে জোর দেন। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মানুষকে ‘জিন্নাহ ও গন্না’র মধ্য থেকে একটাকে বেছে নিতে হবে। ঠিক করতে হবে তাঁরা আখের মিষ্টতা চান নাকি জিন্নাহর (মোহম্মাদ আলী জিন্নাহ) অনুগামীদের দৌরাত্ম্য। ২০১৩ সালের মুজাজফরনগরে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার রাজনৈতিক ফসল বিজেপি তুলেছে ২০১৪ ও ২০১৯–এর লোকসভা এবং ২০১৭–এর বিধানসভা ভোটে। কৃষক আন্দোলন সেই বিভেদ মুছে দিয়েছে। বিজেপির মাথাব্যথার কারণও তা–ই।