খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ‘গভীর চক্রান্তে’ মেতে উঠেছে সরকার: রিজভী

0

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্য রহস্যজনক মন্তব্য করে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, তারা দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে।

মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী যাতে সুস্থ হতে না পারেন সেজন্যই বিদেশে উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে গড়িমসি করছে। কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতাসীনরা মানবতা, বিবেক ও সহমর্মিতার ধার ধারে না। নিজেদের ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য ক্রুর জিঘাংসায় ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিতে তারা পিছপা হয় না। পথের কাঁটা সরাতে তারা সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙ্গে ফেলে। আইনি প্রক্রিয়া, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম তথা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য উক্ত যে প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী তা এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতের মুঠোয়। নাৎসী কায়দায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। নানান চর্চার মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র স্থির ও বলশালী হয়। গণতন্ত্রে অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি অপরিহার্য অংশ। কিন্তু গণতন্ত্র যাতে ধারাবাহিক ও স্থির হতে না পারে সেজন্যই বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপি এবং এর অবিসংবাদিত নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করতে এক বিষাক্ত নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ কারাবাসের ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বেশ কিছুদিন আগে থেকেই দেশনেত্রীর পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট দেশনেত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হলেও সরকার অমানবিকভাবে উদাসীন ও নির্বিকার থাকছে। দেশনেত্রীকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠাতে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী ধারাবাহিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নির্দয় আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি। দুর্বিনীত আক্রমণ, হামলা ও নির্যাতনসহ সকল ধরণের অত্যাচারের যন্ত্র নামিয়ে আনা হয়েছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে নরসিংদী জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে খায়রুল কবির খোকন কার্যালয় থেকে কোনভাবে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলেও নেতাকর্মীরা অনেক রাত পর্যন্ত অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকে। এছাড়া তার সুচিকিৎসার দাবিতে দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মসূচি পালনকালে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু গতকাল কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত হন। হামলায় আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আওয়ামী সরকারের মধ্যে অন্যের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতার ছিটেফোটাও নেই। একটি উন্মুক্ত ও কার্যকরী নির্বাচনের বদলে যাদের জীবনদর্শণ একদলীয় নাৎসীবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত তারা গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন এটাই স্বাভাবিক। দেশনেত্রী বেগম জিয়ার কিছু হলে দেশের কোটি কোটি জনতা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। আমরা আবারো আহবান জানাচ্ছি-অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠাতে উদ্যোগ গ্রহণ করুন।

রিজভী বলেন, গতকাল ২২ নভেম্বর খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির সমাবেশে ১৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জামিরুল ইসলাম জামিল, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহাগ, ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি হেদায়েত হোসেন, বিএনপি কর্মী জাহাঙ্গির, মোস্তফা, মোল্লা ইউনুছ, তৌহিদুজ্জামান মুকুল, ওয়ার্ড যুবদল নেতা সাহাবুদ্দিনসহ ৮ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে এবং বিএনপি‘র খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সসম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মীর কায়সেদ নান্নু, আবু হোসেন বাবুসহ ৭১ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। এছাড়া ২টি মামলা হয়। প্রথম মামলায় খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৮ জনের নামে মামলা হয় এবং অজ্ঞাতনামা ৭১ জন ও দ্বিতীয় মামলায় মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মর্তুজা ও মহানগর বিএনপির নেতা শফিকুল ইসলাম তুহিনসহ ৪০/৫০ জনের নামে মামলা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশ বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনসহ কয়েকশত নেতাকর্মীকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং কার্যালয়ের বাহির থেকে নরসিংদী সদর উপজেলার তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আজাহার উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ড কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন মিয়া, শহর বিএনপি‘র সদস্য মানিক মিয়া, নুরআলাপুর ইউপি যুবদল সদস্য রাজিবুল ও শরীফ মিয়াসহ ১৯  গ্রেফতার করে পুলিশ নিয়ে যায় ।জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহবায়ক কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক নাসিরউদ্দিন নাসির, মহসিন হল ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাউসার আহমেদ আশিক এবং সূর্যসেন হল ছাত্রদলের ছাত্রনেতা মিনারুল ইসলাম রাহাতসহ আরও অনেকেই গতকাল কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশি হামলায় আহত হয়েছে।

গতকাল কেন্দ্র ঘোষিত ঢাকাসহ দেশব্যাপী কর্মসূচিতে পুলিশের হামলায় আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী এবং গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com