খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করেও মাঠে ছিল বিএনপি

0

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে দেওয়ার দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল সোমবার রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।

খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, পাঁচ সাংবাদিক এবং খুলনা থানার ওসি (তদন্ত)-সহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। নাটোর সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। বরিশালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপি আয়োজিত কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীতে পুলিশ-ছাত্রদল সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক আহত : রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে গতকাল পুলিশ ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। নেতাকর্মীদের দাবি, প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে কাকরাইল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ হঠাৎ করেই তাদের ওপর হামলা করে।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, পুলিশের হামলায় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে পুলিশ ছাত্রদলের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ‘পুলিশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেনি।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তানজিল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হই। মিছিল কাকরাইল মসজিদ হয়ে রাজমনি হোটেলের সামনে পৌঁছালে পুলিশ সামনে ও পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বিভিন্ন ইউনিটের অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হন।’

রমনা থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সেই প্রেস ক্লাব থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত পুলিশ আর পুলিশ। এখন, পুলিশ দেখলেই যদি তারা মনে করে হামলা হয়েছে; তাহলে তো কিছু বলার নেই। আমার জানা মতে, পুলিশ হামলা করেনি। আর পুলিশ তো তাদের সামনেই ছিল না।’

খুলনায় সাংবাদিক-পুলিশসহ আহত ২৫ : খুলনায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা পৌনে ১২টার দিকে নগরীর কেডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এতে মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, পাঁচজন সাংবাদিক এবং খুলনা থানার ওসি তদন্তসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির চারজন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।

মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ বিনা উসকানিতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এতে তিনিসহ বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

খুলনা থানার ওসি হাসান আল মামুন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ইটের আঘাতে ওসি (তদন্ত) মো. হানিফসহ পুলিশের পাঁচজন সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৬ রাউন্ড টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নাটোরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহত ২০ : নাটোর সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকাল ১০টার দিকে নাটোর শহরের আলাইপুরে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে নাটোর সদর থানার ওসি ও সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।

নাটোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে আমাদের নেতাকর্মীররা আহত হয়েছেন।’

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছিল। সড়কের ওপর তাদের বিক্ষোভ করতে নিষেধ করা হয়। এ সময় তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে নাটোর সদর থানার ওসি মুনছুর রহমান আহত হন। পরে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।’

বরিশালে বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ : কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরিশাল মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলা বিএনপি এক বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। গতকাল বেলা ১১টার দিকে নগরীর অশ্বিনী কুমার হল সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সমাবেশে মিছিল নিয়ে আসা বিএনপির কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। নেতাকর্মীদের দাবি, সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে আসার সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিশিরাতের সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে। এভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকার এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। বিচার বিভাগে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে এখন তার মৃত্যু কামনা করছে সরকার। যতই প্রশাসন দিয়ে আমাদের সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করা হোক না কেন, আমাদের আটকে রাখতে পারবে না।’

বিভিন্ন স্থানে বিক্ষাভ-সমাবেশ : পাবনায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। গতকাল দুপুরে শহরের লাহিড়ী পাড়ায় জেলা বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ সমাবেশে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব সিদ্দিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে জেলা বিএনপি নেতা মাহমুদন্নবী স্বপন, আসলাম হোসেন, আবুল হাশেম, আহমেদ মোস্তফা নোমানসহ ছাত্রদল ও যুবদল নেতারা বক্তব্য রাখেন।

ময়মনসিংহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে মহানগর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি। গতকাল দুপুরে মিছিল সহকারে নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের গদিচ্যুতির আন্দোলন করা হবে বলে হুমকি দেন।

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদল হাকিমপুর উপজেলা ও পৌরশাখার আয়োজনে গতকাল সকাল ১১টার দিকে হিলি বাজারের বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুরে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর প্রেস ক্লাব চত্বরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেস আলী ইসার সভাপতিত্বে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এ সময় বক্তারা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান।

পটুয়াখালীর দুমকিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গ্রামীণ ব্যাংক সড়কে বিএনপি’র অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল আলম মৃধা, যুগ্ম-আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন হাওলাদার প্রমুখ।

জয়পুরহাটে সমাবেশ করে জেলা বিএনপি। গতকাল বেলা ১২টার দিকে শহরের রেলগেট এলাকায় জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক অধ্যক্ষ সামছুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, মাসুদ রানা প্রধান, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান, সেলিম রেজা ডিউক, শাহ নেওয়াজ কবিরসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গাজীপুরে বিক্ষোভ করেছে মহানগর ও জেলা বিএনপি। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে নগরীর রাজবাড়ী রোডের দলীয় কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালিত হয়। মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন সরকারের সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরগুনায় গতকাল সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপি। তবে পুলিশের বাধায় তা প- হয়ে গেলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এ সময় দলটির তিন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদক সিহাব, তালতলী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্মআহ্বায়ক মিজানুর রহমান ও বদরখালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সদস্য রুবেল।

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে উপজেলা বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার বন্দর কমিউনিটি সেন্টারে সমাবেশ শুরু করেন নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com