কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকির একটি ভিডিও বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আতঙ্ক ছড়ানোর বক্তব্য নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
জানা গেছে, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন উপলক্ষে দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের বিনতিপাড়া গ্রামে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামেন নেতারা। বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) রাতে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী (কলিন্স)।
ভিডিওর বক্তব্যে ইমরান চৌধুরী বলেন, ‘আপনি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ভাই। আপনাকে অনুরোধ করব সুন্দরভাবে মাইকিং করে অথবা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করুন। এতে আপনারও ভালো, আপনার দলের লোকেরও ভালো।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবিদ হাসানের উদ্দেশ্যে কলিন্স বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রার্থীকে (জামিরুল) বিজয়ী করার জন্য কত কী যে করতে পারি, সেটা হয়তো আপনার ধারণা নেই। নৌকা পেয়েছে আমাদের জামিরুল ইসলাম বাবু ভাই। তিনি টোকেন চৌধুরীর (ইমরানের চাচা যুবলীগ নেতা) প্রার্থী, রেজাউল হক চৌধুরীর প্রার্থী, মাহবুব উল আলম হানিফ সাহেবের প্রার্থী। তাকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের যা যা করার দরকার, তা-ই করব।’
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি কখনও বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে, আপনি সেই দিন আবার নির্বাচন করবেন। আমরা সেদিন আপনাকে কিছু বলতে যাব না। কিন্তু এখন আমার দল ক্ষমতায়, আপনি কেন এখন নির্বাচন করে শুধু শুধু নিজের ভাই-বোনকে রক্তে রাঙাবেন। আপনি যদি আপনার দলের লোককে ভালোবেসে থাকেন, আপনি যদি আপনার গ্রামের লোককে ভালোবেসে থাকেন, আপনি যদি আপনার দলীয় কর্মীকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আপনি দলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এই নির্বাচন বর্জন করে ঘরে উঠে বসে থাকুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তানাহলে ভাই এই রক্তের খেলা বন্ধ হবে না। এই রক্তের দায়ভার কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। আগামী ২৮ তারিখে কিন্তু আপনি ভোটকেন্দ্রে যেতেও পারবেন না, ভোটটাও দিতে পারবেন না। শুধু শুধু আপনি আপনার ক্ষতি করছেন। আপনার কর্মীদের ক্ষতি করছেন।’
এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবিদ হাসান বলেন, ‘বক্তব্যটি আমিও শুনেছি। এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক না। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার দাবি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তার হুংকার শুনে ভয় পাইনি আমি। তবে নিরপেক্ষ ও নিরাপদ ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছি। আমি আমার নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রিফাইতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলামের (বাবু) মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে ইমরান চৌধুরী (কলিন্স) ভিডিও বক্তব্যের কথা স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বক্তব্য দিয়েছিলাম। যা হওয়ার হয়েছে।’
উল্লেখ্য, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রিফাইতপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন জামিরুল ইসলাম (বাবু)। আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হয়েছেন আবিদ হাসান (মন্টি সরকার)। মন্টি দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম সরকারের ছেলে। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ সরকার তার চাচা।
২৮ নভেম্বর রিফাইতপুরসহ দৌলতপুর উপজেলার ১৪টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা।