জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জেনারেল ইবরাহিমের

0

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক) প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘সাহস হলে একটি জাতীয় সরকার গঠন করুন। বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসুন,  পেশাজীবী, শ্রমিক, বিরোধীদল, সাবেক সেনাবাহিনী, সাবেক আমলা ও ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করুন।

শনিবার (২০নভেম্বর) সন্ধ্যায় কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, আজ আমরা এখানে সবাই কষ্টে আছি, কিন্তু কেন? যেহেতু বাংলাদেশের অর্থনীতি থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতি রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এই দুর্নীতির দায়ভার বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের যে কষ্ট এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।   সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে, ফলে কৃষকের কষ্ট বেড়েছে। যার কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সরকার এ কাজগুলো করছে অর্থনীতির রক্তশূন্যতা পূরণ করতে। রাজনৈতিক সরকার এবং তাদের অধীনস্তরা যে অর্থনৈতিক দুর্নীতি করেছে তার জন্য ১৮ কোটি মানুষের ওপরে অত্যাচারের স্টিম রোলার চালানো হচ্ছে, মানুষ না খেয়ে থাকছে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা আজকের প্রজন্ম না জানলে আমাদের যাদের বয়স হয়েছে তারা জানি, মনে রেখেছি। বাসন্তির কথা আমরা ভুলিনি। বিদেশিদের ওপর দোষ চাপিয়ে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ পার পাওয়া যাবে না। তেমনি বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ওপর দোষ চাপিয়ে আপনার অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে পারবেন না। মানুষের এই দুর্দশা লাঘবের জন্য আমাদের আবেদন আপনি মন্ত্রিসভায় রদবদল করুন। বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসুন। কিছু সাহসী ভাল মানুষকে নিয়ে সরকার পুনর্গঠন করুন। আপনার বিবেচনায় যদি সাহসটি আনতে পারেন তাহলে জাতীয় সরকার গঠন করুন। সর্বদলীয় সরকার গঠন করুন। পেশাজীবী, শ্রমিক, বিরোধীদল, সাবেক সেনাবাহিনী, সাবেক আমলা ও ধর্মীও নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করুন। এটা বলার পেছনে কারণ বর্তমান পরিস্থিতি একা রাজনৈতিক সরকার সামলাতে পারছেন না। মাত্র ৩০ দিন আগে বাংলাদেশে যে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাংলাদেশের ৯০ভাগ মুসলমানদের কাঁধে দোষ চাপানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেছে রাজনৈতিক ও বিদেশি মহল। আমরা তাকে ঘৃণা, ধিক্কার এবং প্রতিবাদ জানাই। একটিমাত্র রাজনৈতিক দল পারছেন না বিধায় আমরা সব দল-পেশার মানুষকে নিয়ে রাজনৈতিক সরকার গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আপনি তথা বর্তমান সরকার আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবেন। আমরা প্রস্তুত আছি ভবিষ্যতে এই প্রস্তাবকে ব্যাখ্যা করার জন্য।

পৃথিবীতে বাংলাদেশের ইমেজ অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে ইবরাহিম বলেন, আমাদের জানা মতে (আমেরিকায়) যে গণতন্ত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে সেখানে বিশ্বের সব গণতন্ত্রমনা দেশ উপস্থিত থাকবে। সেখানে বাংলাদেশকে এখনও দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এটা আমাদের জন্যে লজ্জার বিষয়। অর্থাৎ পৃথিবী স্বীকার করছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। কারণ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন আগের রাতে হয়ে গেছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারির কথা নাইবা বললাম, যখন কোনো নির্বাচনই হয়নি। ২০০৯ সালের নির্বাচন ছিল ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জির ভাষ্যমতে একটি কম্প্রোমাইজের নির্বাচন। শব্দটি তিনি ব্যবহার করেননি, কিন্তু তার বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ড পড়ে আমরা জানি যে সেটা কম্প্রোমাইজের নির্বাচন ছিল।

খালেদা জিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে জেনারেল ইবরাহিম বলেন, শনিবার বিএনপি অফিসের সামনে গণঅনশন হয়েছে। সেখানেও আমি বক্তব্য রেখেছি। পুনরায় দেশবাসীর উদ্দেশে বলছি খালেদা জিয়া তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী এটা তার একমাত্র পরিচয় নয়। তিনি একজন বীর উত্তম ও একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের সহধর্মিনী। তিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধকালে ত্যাগ শিকারকারী একজন মহিলা। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের নাগরিক, একজন মুসলমান। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের কাছে আমার আবেদন রাজনীতি থেকে ইতোমধ্যে নির্বাসিত মানবিকতা ও সৌজন্যবোধকে পুনর্বহাল করুন। ক্কারি আবু তাহের (এনডিপির চেয়ারম্যান) সকালে বলেছিলেন, যদি খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন এর দায়ভার বর্তমান সরকারকেই নিতে হবে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান আমিও সকালে বলেছি, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া হবে কি হবে না এটাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ।

তিনি বলেন, যদি সুচিকিৎসার জন্য সরকার অনুমতি দেয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি এক প্রকারের হবে। আর যদি অনুমতি না দেয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি আরেক প্রকার হবে। অনুমতি না দিলে পরিস্থিতি যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণেন বাইরে চলে যায়, আমাদের কিছু বলার থাকবে না। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জনগণের মনের কষ্ট দূর করার স্বার্থে, সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সরকারের কাছে আবেদন করছি, আকুল আবেদন, মানবিক আবেদন, রাজনৈতিক আবেদন, কৌশলগত আবেদন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিন, বন্দোবস্ত করুন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই এখন থেকে তিন বছর আগে লন্ডনে কোনো একটি সভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন তারেক জিয়া যেন বাড়াবাড়ি না করে তাহলে তার মা জীবনেও মুক্তি পাবে না। আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়া মুক্ত হননি। তিনি নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে বের হয়েছেন। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে প্রাজ্ঞ কাজ প্রধানমন্ত্রী করেছেন তাকে জেলখানা থেকে বের করে, যার জন্য তাকে আমরা অজস্র ধন্যবাদ জানাতেই থাকব। অনুরূপ আর একবার আবেদন করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনি প্রজ্ঞা দেখান, দয়া-মায়া দেখান, সৌজন্য দেখা। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিন। আদালতের দোহাই দিয়ে কাজটি বন্ধ রাখবেন না। আমরা বিশ্বাস করি আপনি নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজটি করতে পারেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য ও সাবেক সদস্যদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান জেনারেল ইবরাহিম।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এনডিপির চেয়ারম্যান ক্কারি আবু তাহের, কল্যাণ পার্টির স্থায়ী কমিটির সদস্য ফোরকান ইবরাহিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাসান নাসির, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান তামান্না, ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদ খান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নুরুল কবির ভূইয়া পিন্টু, উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) মসিউজ্জামান, যুগ্ম-মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক আল আমিন ভূইয়া রিপন, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল সাকিব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদুর রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য মনিরা বিবি, নূর তাজ ঐশি প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com