নৌকা প্রতীকে সমর্থন না দেওয়ায় লালমনিরহাটে চলবলা ইউনিয়নে এক হিন্দু পরিবারের সদস্যদের মারধর ও তাদের বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজুর বিরুদ্ধে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
হামলায় আহতরা হলেন- তেঁতুলিয়া গ্রামের উপেন্দ্র নাথ বর্মণের ছেলে তপন চন্দ্র রায় (৩২), তার স্ত্রী নয়ন রানী রায় (২৪) ও তার মা শান্তি বালা (৫০)। তাদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তপনের স্ত্রী নয়ন রানী রায় অভিযোগ করেন, ‘আমার স্বামী আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজুর পক্ষে সমর্থন জানাতে অস্বীকৃতি জানান। এতে মিজু ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার স্বামীকে মারধর শুরু করেন। তাকে রক্ষা করতে আমি ও আমার শাশুড়ি ছুটে গেলে আমাদেরকেও মারধর করা হয়।’
তপন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমাকে এলোপাথারি মারধর করা হয়। আমি শুধু বলেছিলাম, আমি আমার পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো। এতেই মিজানুর রহমান মিজুর নির্দেশে তার লোকজন আমার বাড়ির বেড়া ও দরজা ভাঙচুর করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সময় তারা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন। মিজু ও তার লোকজনের ভয়ে আমরা কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ‘আমি তেঁতুলিয়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে তপন চন্দ্র রায় বাঁধা দেন। এতে আমার সমর্থকদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। সেখানে মারধর বা বাড়ি ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বিপক্ষে জনমত তৈরি করতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তপনের পরিবারকে ব্যবহার করে মিথ্যা ও সাজানো ঘটনা প্রচার করছেন।’
কালীগঞ্জ থানার ওসি বলেন, ‘এ ঘটনায় তপনের পরিবার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্তে সত্যতা পেলে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মান্নান জানান, তিনি ঘটনাটি শোনার পর সোমবার রাতে তেঁতুলিয়া গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কোনো প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ভোটারদের নিশ্চিত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সংঘটিত ঘটনায় প্রমাণসহ ভুক্তভোগী পরিবারকে থানায় অভিযোগ করতে বলেছি এবং এটা প্রমাণিত হলে পুলিশ অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘স্থানীয় হিন্দু জনসাধারণ যাতে আতঙ্কিত না হন সেজন্য তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।’
সূত্রঃ দ্য ডেইলি স্টার