লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুরি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রার্থী হয়েছিলেন ৫ জন। তাদের মধ্যে ৪ জনই অভিযোগ করেছেন, ব্যালট পেপার গণনা না করেই এক প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় ব্যালট পেপার পুনরায় গণনার দাবি জানিয়ে তারা গতকাল রোববার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
আবেদনকারীরা হলেন—দয়ানাথ বর্মণ, আমিনুল ইসলাম, ফারুক মিয়া ও মোফাজ্জল হোসেন।
এই ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন আমিনুল হক। তিনি ১ হাজার ১১১ ভোট পেয়েছেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গত ১১ নভেম্বর দুর্গাপুরি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৩ হাজার ৫৪৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ হাজার ৬৮৭ জন।
দয়ানাথ বর্মণ অভিযোগ করে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও সদস্য প্রার্থীদের ব্যালট পেপার গণনা করা হয়নি। সাধারণ ভোটাররা ব্যালট পেপার গণনার জন্য প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্যালট পেপার পুনরায় গণনা করে ফলাফল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সেটা আর করা হয়নি।’
আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামের আশ্বাসে ভোটাররা অবরোধ তুলে নিয়েছিলেন। গতকাল ব্যালট পেপার পুনরায় গণনার কথা থাকলেও রিটার্নিং অফিসার তা করেননি। আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
ফারুক মিয়া বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কথায় আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যালট পেপার পুনরায় গণনার উদ্যোগ নেননি। ব্যালট পেপার গণনা ছাড়াই প্রিজাইডিং কর্মকর্তা একজনকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।’
মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আশ্বাস অনুযায়ী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টকে উপজেলা পরিষদে পাঠানো হয়। কিন্তু পুনরায় ব্যালট পেপার গণনা হয়নি। ব্যালট পেপার পুনরায় গণনা করে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনিই সদস্য হবেন, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
পোলিং এজেন্ট সুভাষ চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও নারী সদস্য প্রার্থীদের ব্যালট পেপার গণনা করা হলেও সদস্য প্রার্থীদের ব্যালট পেপার গণনা করা হয়নি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক অভিযোগ তোলা হলেও তারা ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখেন।’
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘৭ নম্বর ওয়ার্ডে গোবধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট পেপার গণনার পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে। আমি সব সদস্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের নিয়ে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সংযোগ করে দিয়েছি। তাকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলাম।’
পুনরায় ব্যালট পেপার গণনার আশ্বাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যালট পেপার পুনরায় গণনা হবে এমন কোনো প্রতিশ্রুতি আমি দেইনি। আর সেটা আইনসিদ্ধও নয়।’
প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল বাতেন মণ্ডল বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোটের ব্যালট পেপার গণনা করে ফলাফল জানিয়েছি। ফলাফল লিখিতভাবে ওই নির্বাচনী কেন্দ্রে টাঙিয়েও দিয়েছিলাম। নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যালট পেপার গণনা করেই ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যালট পেপার পুনরায় গণনার কোনো সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনাল ব্যালট পেপার পুনরায় গণনার আইনি অধিকার রাখে। ট্রাইব্যুনাল চাইলে অবশ্যই ওই কেন্দ্রের ব্যালট বাক্স উপস্থাপন করা হবে।’
আদিতমারী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার দিলশাদ জাহান বলেন, ‘সদস্য প্রার্থীদের লিখিত আবেদনের অনুলিপি পেয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন কিছুই করতে পারবে না। আইন অনুযায়ী যদি কিছু করতে পারে তাহলে তা নির্বাচন অফিস করতে পারে।’