ধর্ষণ মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন
রাজধানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণ নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি।
রোববার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে কদম ফোয়ারা এলাকায় আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবি করেন নারীনেত্রীরা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আমরা অত্যন্ত হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় এই পর্যবেক্ষণ নারীর প্রতি সংঘটিত অপরাধকে আরও ঘনীভূত করবে, সুষ্ঠুভাবে বিচার কাজ পরিচালনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। এর ফলে দেশের দুইজন নাগরিকের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে। তাদের মানহানি করা হয়েছে এবং মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হয়েছে।
তারা বলেন, পুরুষতান্ত্রিকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। নারীকে এখনো যে অধস্তন ভাবা হয় এবং আইনের সীমাবদ্ধতা আছে এগুলিও একইসঙ্গে স্পষ্ট করে তুলেছে।
বক্তারা প্রশ্ন তোলেন ধর্ষণকারীর স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দেওযার পরও কেন এ রায় প্রভাবিত হলো? রায়টির পর্যবেক্ষণ নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করেছে, লিঙ্গ সমতা রক্ষা করার পরিবর্তে চরমভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তারা এ সময় লিঙ্গ সংবেদনশীল বিচারকের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনায় একজন বিচারকের সাময়িক অপসারণ যথেষ্ট নয়। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং ধর্ষণের ঘটনাসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের সব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে এ সময় তারা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিচার ব্যবস্থায় লিঙ্গ সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে ও নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দূর করতে হবে, বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তনসহ অন্যান্য আইনের সংশোধন করতে হবে। বিচারকদের লিঙ্গ সংবেদনশীল মনোভাব তৈরি করতে তাদের প্রশিক্ষণে জেন্ডার ইস্যুকে সংযুক্ত করতে হবে।
মানববন্ধনে মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ওই বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহার করার জন্য আইনমন্ত্রী এবং প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ডা. ফওজিয়া মোসলেম এ সময় প্রশ্ন রাখেন, এই ঘটনায় আশু প্রতিকার নেওয়া হলো কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে জানেন কিনা, যথাযথভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করছেন কিনা, ভিকটিমের প্রতি লিঙ্গ সংবেদনশীল মনোভাব রাখেন কিনা তা কে মনিটর করবে? স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বিচার বিভাগের এ দুর্বলতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নারীবান্ধব নানা আইন হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন নেই। বিচারব্যবস্থা যেন সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার পথকে সংকুচিত না করে প্রসারিত করতে পারে সে লক্ষ্যে আরও কাজ করতে আইন ও বিচার বিভাগকে আহ্বান জানান তিনি।
মহিলা পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, বিচারের রায়ই শেষ কথা নয়। দোষ সবসময় প্রমাণিত হয় না, তা সত্ত্বেও দোষী সমাজের কাছে দোষী হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও লবি ডিরেক্টর জনা গোস্বামীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহসভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক মাকসুদা আক্তার লাইলী, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এ কে রাশেদুল হক প্রমুখ। ছিলেন।