সব দায় নির্বাচন কমিশনের: ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটছে, তার দায় নির্বাচন কমিশনের। তাদেরকে যথেষ্ঠ ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও তারা তা প্রয়োগ করতে পারছে না। সহিংসতা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এর আগেও যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তখনো তারা ব্যবস্থা নেয়নি। এখনো তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন একেবারে জিরো। তারা নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে। এখন নির্বাচন পরিচালনা করছে স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা। এসব কারণে মারামারি হচ্ছে, আরও হবে। এটা তো কেবল শুরু।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সহিংসতার জন্য একে-ওকে দোষারোপ করছে। সাফাই গাইছে যে, ‘খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে।’ এসব করে আন্তর্জাতিকভাবে অথর্ব নির্বাচন কমিশন হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে কোথাও সুনাম নেই এই কমিশনের। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটা ধ্বংস হয়ে গেল। এই প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তীতে যদি কেউ গড়ে তুলতে চায়, তাদেরকে নাকানি-চুবানি খেতে হবে। হয়তো ভবিষ্যতে এভাবেই চলবে। এতে খুব ভালো কিছু আশা করা যায় না।
সংঘর্ষের সঙ্গে হালুয়া-রুটির সম্পর্ক আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সার্বিক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে নির্বাচনে এখন হালুয়া-রুটির বিষয় আছে। এটা একটা বড় ফ্যাক্ট। এখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া মানে সে অনেক ক্ষমতাবান। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে তার সাপোর্টে এমপিরা চলেন। বেশির ভাগ এমপিদের তো কোনো জনসমর্থন নেই। তারা একটু ভয়ে ভয়ে থাকেন। সুযোগ পেলে লোকজন তাদেরকে দৌড়াবে। সেই জায়গায় এই তৃণমূলের সাপোর্ট খুব প্রয়োজন। এসব কারণে দলীয় প্রতীক দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে তৃণমূলে। এটা আমরা মানা করেছিলাম বহুবার। এসব কারণে মারপিট হচ্ছে। জোর করে ভোট হচ্ছে। ভোট ছিনতাই হচ্ছে। এমপি সাহেবরা হস্তক্ষেপ করছেন। র্যাব-পুলিশ ব্যবস্থা নিলে এমপি সাহেবরা প্রশ্ন করছেন- ‘ব্যবস্থা নিলেন কেন?’ সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইউপি নির্বাচন একেবারেই তৃণমূলের নির্বাচন। বলতে গেলে একেবারে ব্যক্তিগত নির্বাচন, পারিবারিক নির্বাচন, গোষ্ঠীগত নির্বাচন। একেবারে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নির্বাচন। কিন্তু এখানে যখন দূরে বসে কেউ মনোনয়ন দেয়, তার কতটুকু জনসমর্থন আছে কেউ বলতে পারে না। হয়তো সে ব্যক্তিগত আনুগত্যের কারণে মনোনয়ন পেয়েছে। অনেক জায়গায় আবার মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। হয়তো আরও যোগ্য ব্যক্তি ছিল, যে মনোনয়ন পায়নি। কিন্তু মনোনয়ন না পেলেও তার জনসমর্থন বা প্রভাব তৃণমূলে আছে। কাজেই সে মানবে কেন? তার তো নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ফলে সে বিদ্রোহী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষই প্রভাবশালী ও জিততে মরিয়া। সংঘর্ষ তো হবেই।