রক্তস্নাত ইউপি নির্বাচন: ব্যর্থতার বেশির ভাগ দায় নির্বাচন কমিশনের
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে এসব কী হচ্ছে? নির্বাচনি শৃঙ্খলা বলতে কিছু কি আর অবশিষ্ট থাকছে? দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ চলাবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো জায়গায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে গুলি বিনিময় করেছে প্রার্থীদের সমর্থকরা।
এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ব্যালট পেপারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, কেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ আরও অনেক ধরনের বেআইনি কাণ্ড ঘটানো হয়েছে এ নির্বাচনে। এসব ঘটনায় চার জেলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছুটা উত্তেজনা বরাবরই থাকে। তবে এবার সহিংসতা যে পর্যায়ে চলে গেছে, তা চিন্তার বিষয়। নির্বাচনি সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষ্ক্রিয়তাকেই প্রথমত দায়ী করছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সংঘাত, বিশৃঙ্খলা ও হতাহতের ঘটনাগুলো ঘটছে, তার দায় ইসি কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
ইসির বিরুদ্ধে যখন সমালোচনার ঝড় উঠছে, তখন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেছেন, ভোট খুব সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তার এ কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করা বড় কঠিন। চলমান ইউপি নির্বাচনের মাঠে দলীয়ভাবে বিএনপি না থাকায় অধিকাংশ স্থানেই রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছেন সংঘাতে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।
ইউপি নির্বাচনে অব্যাহত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, সহিংসতার ঘটনার জন্য দায়ী প্রার্থীদের মধ্যে দু-একজনের প্রার্থিতা বাতিলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হলে তা থেকে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারেন। আমরাও মনে করি, নির্বাচন কমিশন কঠোর অবস্থান গ্রহণ না করলে সহিংসতার প্রবণতা রোধ করা যাবে না।
নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা তখনই পূরণ হতে পারে, যখন রাজনৈতিক দলসহ নির্বাচনের অন্যান্য অংশীজন তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। তবে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশন-এ দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এ দুই প্রতিষ্ঠানই চলমান ইউপি নির্বাচনে তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না।
ফলে দেখা দিচ্ছে সংঘাত-সংঘর্ষ। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচনি আইন ও বিধিমালায় ইসিকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সহিংসতা রোধে কেন তারা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তৃতীয় ধাপের ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। আমরা আশা করব, এসব নির্বাচনসহ পরবর্তী সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ইসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।