এখনকার নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়: বদিউল আলম

0

সংঘাত, সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হওয়া দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এটা কোনো নির্বাচনই হয়নি। নির্বাচন নির্বাচন খেলা হয়েছে। বিকল্প থাকলেই তাকে নির্বাচন বলা হয়। এ নির্বাচনে অনেক জায়গায় প্রতিদ্ধন্ধীই ছিল না। তারা দাঁড়াতেই সাহস পায়নি। এই যে সহিংসতা, খুনোখুনি, জালিয়াতি, কেন্দ্র দখলের ঘটনা- এ নির্বাচন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়া। কিন্তু তারা যেন নির্বাসনে চলে গেছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, নানা কারণে স্থানীয় সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা জনগণের দোরগোড়ার সরকার। কিন্তু এটা এখন চরমভাবে কলুষিত। তিনটি রোগ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা ধ্বংস করে  দিয়েছে। এগুলো হলো- দলীয় মনোনয়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, ফায়দাভিত্তিক রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশনের নির্বাসনে যাওয়া। এসব কারণেই এ হানাহানি ও নৈরাজ্য।

তিনি বলেন, মারামারি-খুনোখুনি অধিকাংশই হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এটাই হওয়ার কথা। যেহেতু তারা দুই পক্ষই ক্ষমতাসীন দলের লোক। নির্বাচনে জয়ী হলে নানা সুযোগ-সুবিধা পাবে। এজন্য তারা প্রতিপক্ষকে মাঠছাড়া করতে মরিয়া। বিরোধী দল হয়তো মাঠেই নামতে পারত না। এজন্য তারা নির্বাচনে আসেনি। তারা জানত নির্বাচনে সময়, শ্রম ও অর্থ নষ্ট হবে, ঝুঁকি আছে, কিন্তু লাভ হবে না। নির্বাচনের এ সংস্কৃতি আমাদের চরম অবক্ষয়। জাতি হিসেবে এর মূল্য আমাদের দিতে হবে।

সুজন সম্পাদক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমরা যে মারামারি-খুনোখুনি দেখলাম, এটা রোগের উপসর্গ। রোগ কিন্তু একাধিক। প্রথম রোগটা হলো আমরা সুবিধাবাদের রাজনীতির চর্চা করছি। জনস্বার্থে নয়, রাজনীতি এখন ব্যক্তিস্বার্থে, গোষ্ঠীস্বার্থে ও দলীয় স্বার্থে। রাজনীতির উদ্দেশ্য হলো কিছু পাওয়া। যারা দলীয় পদ-পদবি পায় বা নির্বাচনে জয়ী হয়, তারা বিভিন্ন রকম অযাচিত সুযোগ-সুবিধা পায়। তারা অন্যায় করে পার পেয়ে যায়। এ ফায়দাভিত্তিক রাজনীতিই হলো অন্যতম রোগ। এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতির চরম অবক্ষয়।

দ্বিতীয় রোগটি হলো দলীয় মনোনয়নে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। বহু বছর ধরে স্থানীয় নির্বাচন ব্যক্তি মনোনয়নের ভিত্তিতে করার বিপক্ষে আমি। কারণ আমরা দেখেছি পশ্চিমবঙ্গে এ কারণটিই ঘরে ঘরে নির্বাচনী সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন এখানে তার প্রতিফলন দেখছি। এখানে যারাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেয়েছে, জয়ের ব্যাপারে তারা এক প্রকার নিশ্চিত। অন্য প্রার্থীদের মাঠছাড়া করতে মরিয়া। আবার অন্য প্রার্থীরাও মরিয়া। তারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছে। ফলে তারাও বিভিন্নভাবে প্রভাব খাটিয়েছে। এমনকি সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। দলভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

তৃতীয় রোগ হলো নির্বাচন কমিশনের। তারা যেন নির্বাসনে চলে গেছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে, বেতন-ভাতা নিচ্ছে, কিন্তু দায়িত্ব পালন করছে না। যারা অন্যায় করছে, হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, সহিংসতা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যদি দ্রুতগতিতে ব্যবস্থা নিত তাহলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ত না। যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। যেখানে পরিস্থিতি বেসামাল সেখানে যদি নির্বাচন স্থগিত করত অথবা যেখানে নির্বাচন হয়ে গেছে কিন্তু নির্বাচনকে প্রভাবিত করার নানা ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচন বাতিল করত তাহলে নির্বাচন এই বেসামাল পর্যায়ে পৌঁছাত না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com