পরিবহণ খাতের নৈরাজ্য চলছে সর্বত্র
পরিবহণ খাতের নৈরাজ্য এখন এক সাধারণ আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত রাজধানীতে এ আলোচনা চলছে সর্বত্র।
বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও চলছে নৈরাজ্য। অধিকাংশ বাসেই নেই বর্ধিত ভাড়ার তালিকা আর তালিকা না থাকায় যাত্রীরা বুঝতে পারছেন না কোন গন্তব্যের ভাড়া কত। সুযোগ বুঝে তাদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন চালক ও সুপারভাইজাররা।
মাঠে যদিও বিভিন্ন সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে এবং তারা অনিয়ম পেলেই জরিমানা করছেন; কিন্তু অধিকাংশ বাসই থেকে যাচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দৃষ্টির আড়ালে। দ্বিতীয় কথা, যাত্রীরা বুঝতে পারছেন না কোন বাস ডিজেলে আর কোনটি সিএনজিতে চলছে।
কোন বাস কিসে চলছে, তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না বলে যাত্রীরা যেমন নিয়মমাফিক ভাড়া দিতে পারছেন না, তেমনি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পড়ছেন বিপাকে। অবশ্য সিএনজি ও ডিজেলচালিত বাসের শনাক্তকরণ চিহ্ন হিসাবে স্টিকার লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা বলব, এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে যাতে কোনো ধরনের কারচুপি না হয়, তা-ও পরীক্ষা করতে হবে।
ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে ‘সিটিং’ ও ‘গেটলক’ বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। তাদের যুক্তি, আইনে সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। অথচ একসময় সরকারের পক্ষ থেকে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করার কথা বলা হলেও বাস মালিকরা সে কথায় কান দেননি।
এখন তারাই সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিচ্ছেন। এটা ঠিক, মানুষের চাহিদা হচ্ছে উন্নত সার্ভিস। সেই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিটিং সার্ভিস যদি আক্ষরিক অর্থেই মানা হতো, তাহলে বলার কিছু ছিল না।
কিন্তু ভাড়া বেশি নেওয়ার পরও দেখা গেছে বাড়তি যাত্রী তোলা হয়েছে এবং তারা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করছেন। এ নৈরাজ্যের চেয়ে সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়াই উত্তম বলে মনে করি আমরা।
মালিকপক্ষ এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছে, তবে সিটিং সার্ভিস তুলে দিলেই যে গণপরিবহণে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, তেমন ভাবার অবকাশ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা, ন্যায্য ভাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এটা করতে হলে প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা সুনির্দিষ্টভাবে টাঙিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয় কথা, ন্যায্য ভাড়ার বিষয়টি প্রতিপালিত না হলে সংশ্লিষ্ট বাসের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তৃতীয়ত, সিএনজিচালিত ও ডিজেলচালিত বাসের ভাড়ায় যথার্থ পার্থক্য থাকতে হবে। গণপরিবহণে অনেক নৈরাজ্য হয়েছে, এ নৈরাজ্য আর চলতে দেওয়া যায় না।