হিজড়াদের জন্মই যেন আজন্ম পাপ !
হিজড়া শারীরিকভাবে ছেলে হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেন, কিন্তু তাদের মনোজগৎ হয় মেয়েদের মতো। তাই তারা মেয়েদের জীবনযাপনে আগ্রহী থাকে।
ছেলে হয়ে জন্ম নেওয়ার পরেও ধীরে ধীরে হিজড়া, ট্রান্স জেন্ডার, বৃহন্নলা, উভয় লিঙ্গ বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে পরিণত হয়।
আর এই মেয়েদের জীবনযাপন করতে গিয়েই তাদেরকে সমাজের অন্যদের কাছ থেকে প্রতি পদে পদে বৈষম্য এবং বঞ্চনার শিকার হতে হয় তাদের। এ যেন জন্মই তাদের আজন্ম পাপ।
সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকার হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষ এবং এই জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা সংগঠন ও ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ বৈষম্য এবং বঞ্চনার বিষয়ে জানা যায়।
পুরান ঢাকার নাজুমুদ্দিন রোডের ইমু হিজড়া এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি ছোট থেকেই ছেলে হিসেবে বড় হচ্ছিলাম, স্কুলে পড়াশোনাও করতাম, কিন্তু আমার মনমানসিকতা থাকতো মেয়েদের মতো। এর ফলে সবাই আমার সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতো। আমাকে হিজড়া, বা মাইগ্যা বলতো। একপর্যায়ে আমি আর বাড়িতে থাকতে পারি না, তখন বাসা থেকে বের হয়ে আসি। আমার মতো বেশিরভাগ হিজড়াই ক্লাস ফাউভ, সিক্স বা নাইন-টেনে থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় মানুষের নানা বঞ্চনার কারণে।
ভাটারা এলাকার শ্যালী নামের একজন হিজড়া বলেন, বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করতে আমার নানা সমস্যা হয়, মানুষ নানা ধরনের কথা বলে। চাকরি করতে গেলেও কেউ কাজ দিতে চায় না, হিজড়া বলে বের করে দেয়। করোনার ভেতরে আমাদের কয়েকজনকে জোড় করে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়। হিজড়া বলে কি আমরা সবখানেই এমন লাঞ্ছিত এবং বঞ্চিত হবো?
একই এলাকার সূবর্ণা নামে আরেক জন হিজড়া বলেন, আমি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতাম, কিন্তু আমি হিজড়া হওয়ার কারণে আমাকে কাজ থেকে বের করে করে দেওয়া হয়, এখন আমি বেকার অবস্থায় অনেক কষ্টে আছি। অনেক দিন থেকেই আমি কাজের সন্ধান করছি, কিন্তু হিজড়া বলে কেউ আমাকে কাজ দেয় না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা, সেখানে আমার বাবা মা এবং ভাইবোন থাকে। পারিবারিক ভাবেও আমি অনেক খারাপ অবস্থায় আছি। পরিবার থেকেও আমি অনেক কষ্ট, অবহেলা এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছি। আমি গ্রামের বাড়িও যেতে পারি না, সেখানে গেলেও আমাকে একটা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হয়। তাই আমি সবার কাছে একটা কাজের জন্য সহযোগিতা চাই।