গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধি: নৈরাজ্য সৃষ্টির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস ও লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন মালিকরা। কিন্তু তিন দিন জনগণের যে দুর্ভোগ হয়েছে, তার মাশুল কে দেবে? অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ডিজেলের দাম যেহেতু বাড়ানো হয়েছে, সেহেতু পরিবহণ ভাড়া বাড়ানো ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রশ্ন হলো, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ কী? জনগণকে জিম্মি করা হয়েছিল কেন? জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির জন্য কি জনগণ দায়ী? পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের এ ধরনের জনবিরোধী পদক্ষেপ কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এবার দেখা যাক পরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধির চিত্র। ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ২৩ শতাংশ। কিন্তু বাসভাড়া বাড়ানো হয়েছে দূরপাল্লার রুটে ২৭ শতাংশ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলরত বাসে ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর লঞ্চের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে একলাফে ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, ডিজেলের ভাড়া বৃদ্ধিতে বাস-লঞ্চ মালিকদের পোয়াবারো! তারা এতে লাভবান হয়েছেন। যত বোঝা, সব চাপানো হয়েছে জনগণের ঘাড়ে। তবে সরকার ঘোষিত নতুন ভাড়ার বোঝা কার্যক্ষেত্রে আরও বাড়ে কিনা, উদ্বেগের সঙ্গে তা দেখার অপেক্ষায় আছে জনগণ।
কারণ রাজধানী ঢাকার মাত্র ৫ শতাংশ এবং দূরপাল্লার ৪০ শতাংশ বাস চলে ডিজেলে। বাকি সব বাস চলে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি)। নতুন ভাড়া শুধু ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে ডিজেল ও সিএনজিতে চলাচল করা বাস কীভাবে পৃথক করা হবে, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বিআরটিএ। তাই জনমনে আশঙ্কা, সব বাসই পেতে যাচ্ছে নতুন ভাড়া কার্যকরের সুবিধা।
বস্তুত ইতোমধ্যেই এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাই আমরা জোরের সঙ্গে বলতে চাই, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সিএনজিচালিত বাস যেন কোনোভাবেই ভাড়া বাড়িয়ে দিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেখতে হবে বাস ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি হওয়ার মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে আমরা বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভূমিকায় দেখতে চাই। তারা যেন বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে না থাকেন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে; আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশের বাজারেও কমানো হবে। প্রশ্ন হলো, গত ৭-৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম ছিল। একপর্যায়ে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪০ ডলারেও নেমে এসেছিল। তা সত্ত্বেও দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি।
কাজেই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশে আদৌ দাম কমানো হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া জ্বালানি তেলের দাম যদি পরে কমানোও হয়, সেক্ষেত্রে পরিবহণের ভাড়া কি কমানো সম্ভব হবে? দেশে এমন কোনো নজির নেই। কাজেই জনগণের কাঁধে যে বোঝা চাপানো হলো, তা আর নামছে না। আমরা সরকারের কাছে শুধু এটুকুই প্রত্যাশা করব-ভাড়া নিয়ে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা যেন কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারেন, সে বিষয়টি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।