সারা দেশে ‘জিম্মি’ দশায় যাত্রীরা

0

সম্প্রতি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে ধর্মঘট শুরু করে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। ৩ দিন ধরে পরিবহণ ধর্মঘট চলার পর গতকাল পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় কর্তৃপক্ষ।

এ ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর নতুন ভাড়ায় চলছে গণপরিবহণ। যাত্রীদের অভিযোগ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি আদায় করা হচ্ছে গণপরিবহণগুলোতে।

সারা দেশে এখন পরিবহণ মালিকদের হাতে জিম্মি বলে মনে করছেন স্বল্প আয়ের মানুষেরা। তাদের দাবি,  প্রয়োজনের তাগিদে আগের থেকে আরো বাড়তি ভাড়ায় যেতে হবে গন্তব্যে। এ বিষয়টি নিয়ে তারা অসহায়ত্ব বোধ করছে।

মুগদার পথচারী ফয়েজ আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা, গরিবের কষ্ট কেউ বুজে না।
পুরান ঢাকার পথচারী জাকির বলেন, বেশি ভাড়া বাড়ানো হলো গরিবদের মারার জন্য। গবিরের কষ্ট সরকার বুজবে না।

আজিমপুর বাস টার্মিনালে কথা হয় লিমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাস ভাড়া নিয়ে শুধু আমি না ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ! আমরা বেশি ভাড়া দিতে রাজি না কারণ আমাদের আয়-রোজগার বিচেনা করে চলতে হয়। সরকারের কাছে অনুরোধ বিষয়টি তার দেখা উচিত কারণ আমরা গরিব দেশে বসবাস করি।

মিরপুরের পথচারী আনিস হোসেন বলেন, এদেশে মাফিয়া কায়েম চলছে। মন যা চাইছে তাই করছে সরকার। পরিবহণ সেক্টরের কাছে জিম্মি আমরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশে ভাড়া নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা! যাত্রীদের দাবি, ধর্মঘট প্রত্যাহার হলো সাধারণ মানুষ চলাফেরায় কষ্ট পেল এতে কি লাভ হলো।

সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গণপরিবহণে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও আদায় করা হচ্ছে বেশি টাকা। ডিজেলচালিত গণপরিবহণের ভাড়া বেড়ে যাওয়ার সুযোগে সিএনজিচালিত গণপরিবহণের ভাড়াও বাড়িয়ে দিয়েছে মালিকরা। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে শিক্ষার্থী ও স্বল্প আয়ের মানুষ।

গণপরিবহণের ভাড়া তদারকিতে রাজধানীসহ দেশের কোথাও সড়কে দেখা যায়নি কোনো মনিটরিং টিম বা ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা।

এদিকে, সারা দেশে নতুন ভাড়ায় চলছে বাস ও লঞ্চ। টানা ৩ দিনের অঘোষিত ধর্মঘটের পর সোমবার চলাচল শুরু করেছে বাস ও লঞ্চ। এতে চলাফেরায় স্বস্তি ফিরলেও বাড়তি ভাড়া নিয়ে অসন্তুষ্ট যাত্রীরা।

সোমবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি গ্যাসচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে চালক-সহযোগীদের বাগবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটছে। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ঢাকা জেলা বাস মালিকদের সংগঠন। তবে এ বিষয়ে কেউ বাস মালিক সংগঠনের কেউ কথা বলেতে চাননি।

এদিকে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া জনগণের পক্ষে নয় বরং বাস মালিকদের পক্ষে বলে মনে করেন রাজশাহীর যাত্রীরা। সিএসজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। জানালেন, তা নিয়ন্ত্রণে কোনো তদারকিও নেই। এছাড়া রাজশাহী-ঢাকা রুটের বাস ভাড়া ৪৮০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০০ টাকা, এসি বাসের ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০০ টাকা।

ময়মনসিংহ নগরীর মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী বাসগুলোতে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী। এছাড়া অন্যান্য গন্তব্যের বাস এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশাতেও অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে চালকরা।

খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসের যাত্রীরা ভাড়া বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া সিলেট, যশোরসহ সারা দেশের বাস যাত্রীরাই নতুন ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, লঞ্চেও নতুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন বিভিন্ন রুটের লঞ্চযাত্রীরা।

বাস ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। রোববার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে গ্যাস, অকটেন ও পেট্রলচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে না বলে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। এর আগে সাত ঘণ্টার টানা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার।

সহকারী সচিব জসিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রতি কিলোমিটারে দূরপাল্লার বাসে ১.৪২ এর বদল নতুন ভাড়া ১.৮০ টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ক্ষেত্রে ১.৭০ টাকার জায়গায় ২.১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বনিন্ম ভাড়া বাসে ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা হবে। দূরপাল্লার বাসের ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ, মহানগরের বাসের ভাড়া বাড়ল ২৬.৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে গড় ভাড়া বাড়ল ২৬.৭৫ শতাংশ।

সিএনজিচালিত গাড়িতে ভাড়া বাড়বে না

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন মালিকদের দাবির মুখে বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে যেসব গাড়ি সিএনজিতে চলে সেসবের ভাড়া বাড়বে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

গতকাল রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে গণপরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর থেকে জ্বালানি তেলের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় সরকার। প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। বাড়তি দামের কারণে ৪ নভেম্বর থেকেই পণ্যবাহী পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন মালিকরা। ৪ নভেম্বর থেকে যাত্রীবাহী বাস চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। রোববার ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হলেও ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন পণ্যবাহী যানবাহন মালিকরা। তবে ওইদিন বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান জ্বালানি জানান, তেলের দাম না কমলে ট্রাক চলবে না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com