কোনো মার পুত থাকলে আসুক ‘কালকের পর স্টিমরোলার চালাতে হবে, আমি থাকবো দুইডা অস্ত্র লইয়া’
‘আমরা কিন্তু এত নরম না। এখনো সময় আছে। কালকের পর থেকে স্টিম রোলার চলবে। যদি কোনো মার পুত থাকে, তাহলে আমার সাথে যেন যুদ্ধ করতে আসে। এই নৌকার বিপক্ষে গিয়া যাই ইচ্ছে তাই করতে পারবেন না।’ এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কালকিনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন।
সম্প্রতি এমন হুমকি দেয়ার দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে এই হুমকি দেন। গত শুক্রবার রাতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের সূর্যমনী বাজারে নির্বাচনী পথসভায় আফজাল হোসেন এই হুঁশিয়ারি দেন।
যুবলীগ নেতা আফজাল লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মজিবুর রহমান মোল্লার ভাতিজা। তার ওই পথসভায় দেয়া বক্তব্যের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে।
এক মিনিট ৪২ সেকেন্ডের প্রথম ভিডিওতে আফজাল হোসেন বলেন, ‘এখনো সময় আছে, কারো মার-পুত নাই যে নৌকা পেছনে আইয়া বাধা দিবে। সে ক্ষমতা কারো নাই। আবদুস সোবাহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য) এত নরম না। তিনি (আবদুস সোবাহান) রোববার থেকে স্টিম রোলার চালাতে বলবে, আপনারা (নৌকার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা) চালাবেন। আর আমি থাকব আমার কাছে দুইডা অস্ত্র লইয়া। দুইডা অস্ত্র লইয়া আমি থাকমু, কারো বাপ-পুত থাকলে আমার সামনে জানি আসে। দয়া কইরা নৌকার বিরুদ্ধ কেউ যাইয়েন না। নৌকার বিরুদ্ধে গেলে কারো বাঁচন নাই।’
২ মিনিট ৮ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে আফজাল বলেন, ‘আমরা কিন্তু এত নরম না। এখনো সময় আছে। কালকের পর থেকে স্টিম রোলার চলবে। যদি কোনো মার পুত থাকে, তাহলে আমার সাথে যেন যুদ্ধ করতে আসে। এই নৌকার বিপক্ষে গিয়া যাই ইচ্ছে তাই করতে পারবেন না।’
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, পথসভায় আমার ভাতিজা কোনো হুমকি দিয়ে কথা বলেনি। আফজাল বলেছে, ‘আমি প্রার্থী ছিলাম। আমার চাচারে সমর্থন দিলাম। আপনারা সবাই আমার চাচারে নৌকায় ভোট দিবেন।’ আমার ভাতিজাও নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিল। আমাকে মনোনয়ন দেয়ায় সে এখন নৌকার পক্ষে কথা বলেছে। তবে সে কোনো খারাপ কথা বা হুমকি দিয়ে কিছু বলেনি।
ভোটারদের হুমকি দিয়ে প্রচারণা কতটুকু যৌক্তিক, এমন প্রশ্ন করা হলে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা নৌকা পাইছি, একটু হুমকি-ধমকি কি দিতে হবে না? একখানে গেলে পাল্টাপাল্টি কথা হয়। আমার ঘরের পাশেই মিটিং হয়েছে। ঘরের পাশেই আমার আপন চাচাতো ভাই আছে। ওই সূত্র ধরেই এসব কথা বলা। তবে ভোটারদের হুমকি স্বরূপ কিছু না। আমার চাচার নির্বাচন করতাছি। তিনি মিনমিন করে কথা বলে। নৌকার জোয়ার নামাইতে পারে নাই। মিনমিন করলে নৌকার অবস্থা কী হবে? আমি নৌকার পক্ষে কথা বলেছি। হুমকি দেয়া হয়েছে যারা নৌকাকে নিয়ে কটূক্তি করে কথা বলে, সেখানে কি দুই-চারটা কথা আসবে না। সেই সূত্রে কিছু কথা বলেছি। তবে এসব কথাও ঘরোয়া।’
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভিডিওটা আমি দেখেছি। পথসভায় এভাবে হুমকি ও উসকানিমূলক কথা বলা আচরণবিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এসব দেখার জন্য তিনজন ব্যক্তি কাজ করেন। তারা হলেন- নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, রিটার্নিং অফিসার ও ওসি। তারা সমন্বিতভাবে আচরণবিধির বিষয়গুলো দেখবেন। তারাই পদক্ষেপ নিবেন।’
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, ১১ নভেম্বর কালকিনি ও ডাসার উপজেলার ১৩টি ইউপিতে ভোট হবে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মজিবুর রহমান মোল্লা, স্বতন্ত্র প্রার্থী মৌসুমি হক সুলতানা ও লিয়াকত হোসেন।