নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত দেখবো
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার কথা জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। সব বাধা অতিক্রম করে নির্বাচনে লড়াই করার কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল আগারগাঁওয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়ন দাখিল করতে এসে এসব কথা বলেন তাবিথ। একই সঙ্গে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি। তাবিথ আউয়াল বলেন, সন্দেহ আমাদের একার না, সাধারণ জনগণের অনেক প্রশ্ন আছে। তারা নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না, তাদের ভোট গণনা হবে কি না। এ কথাগুলো নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি।
তিনি বলেন, আমরা মনে করি, বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়ে গেছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। অনেক অপরিষ্কার জায়গা আছে।
এগুলো নিয়ে আগামী দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, আপনারা অতীতেও দেখেছেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস। যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করবো এগিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো। তার মানে এই নয়, যে ভুলগুলো হতে যাচ্ছে, সেগুলো আগে থেকে মেনে নেবো বা জনগণ মেনে নেবে।
নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাবিথ বলেন, আমরা আশাবাদী, আগামী দিনগুলোতে সংলাপের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হবে। গত নির্বাচনের পর অনেক নির্বাচনে বিশেষ করে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিলাম। অনেক অভিযোগ তুলেছিলাম, যেগুলোর একটাও আমলে নেয়া হয়নি ও তদন্ত করা হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, সেখানেও আমরা শেষ পর্যন্ত ছিলাম। যদিও দুঃখজনক- ভোটাররাও ভোট দিতে পারেননি, আর গণনা তো দরকারই ছিলো না। এবারও আমরা বলছি, নির্বাচন যদিও সুষ্ঠু হবে না, তাও আমরা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে চেষ্টা করছি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। বিএনপি মনোনীত এই প্রার্থী বলেন, আমাদের একার না, জনগণেরও আস্থা নেই নির্বাচনের প্রতি। তারপরও আমরা নিজেদের ওপর, যে জনগণ ভোট দিতে চেয়ে পারেনি, তাদের ওপর আস্থা রেখে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এ যাত্রায় এগিয়ে যাবো। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কট প্রসঙ্গে তাবিথ আউয়াল বলেন, গত নির্বাচনে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিলো সেখানে আমাদের একটা প্রতিবাদ ছিলো। নির্বাচনটাকে আমরা বয়কট করেছিলাম। এটা ইলেকশনের দিন। আমরা চেষ্টা করেছিলাম একদম শেষ পর্যন্ত থাকতে। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত এই ইলেকশনে থাকবো। এবং শেষটা দেখেই ছাড়বো। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা তুলে ধরেছি, নিশ্চয় ইলেকশন কমিশন আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমরা আশাবাদী বসার মাধ্যমে আমরা কনভিন্স করতে পারবো, ইভিএম ব্যবহার যেন না হয়। আগামী দিনগুলোয় সংলাপে বোঝা যাবে, ইভিএম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কি হয়। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন আরেকটি বক্তব্য দিয়েছে, যেটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যদি সবাই না চায়, তবে ইভিএম ব্যবহার করবে না। তাই এখানে কথা বলার একটা ফাঁক রয়েছে। ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে আবার টেকনিক্যাল টিম নিয়ে বসবো। যাদের খারাপ এক্সিপেরিয়েন্স আছে ইভিএম নিয়ে, তাদের সকলকে নিয়ে এসে ইলেকশন কমিশনে বসবো।
জনগণ আপনাকে কেন পছন্দ করবে- এ প্রশ্নের জবাবে তাবিথ বলেন, জনগণ এখন অপেক্ষায় আছে, যে ভয়ভীতির দেশে বাস করছে, সেখানে তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ভোটের অধিকার ফেরত পাচ্ছে কি না। আমরা একটা বিষয় পরিস্কারভাবে বলতে চাই, ইলেকশন বিগত দিনে অলরেডি বিতর্কিত হয়েছে। এখানে পুলিশ প্রশাসনের যে ভূমিকা ছিলো সেখানেও আমাদের অনেক আপত্তি আছে। ভোটারদের আপত্তি আছে। ভোটগণনা নিয়ে আপত্তি আছে। আগের দিনে ভোট হওয়াতে তা নিয়েও আপত্তি আছে। ইভিএম হল আরেকটা বিষয়, যেটা নির্বাচন কমিশন টেনে নিয়ে এসেছে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে। ইভিএম সংখ্যা বাড়ানোর কথা তারা বলছে, কিন্তু কমানোর কথা বলছে না। ইসি দাবি না মানলে নির্বাচনে থাকবেন কি না জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা আগাম কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে ইলেকশন কমিশনার বলে দিয়েছেন, সবাই যদি ইভিএম না চায়, তাহলে সেটা রাখবেন না। তার মানে কথা বলার একটা সুযোগ আছে।
সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। ইলেকশনের রুলসে পরিস্কার বলা আছে, কোনো ক্যান্ডিডেট অথবা রাজনৈতিক দল যারা ইলেকশনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে , তারা যখন দরকার তখন সংলাপ করতে পারে। ওই অধিকার বিবেচনা করে আমরা সংলাপের দিকে এগিয়ে যাবো।
এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেমের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির মনোনীত এই প্রার্থী।
এ সময় সময় তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আরো ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তফসিল অনুযায়ী, আগমী ৩০শে জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গতকাল। যাচাই-বাছাই হবে ২রা জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ই জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ই জানুয়ারি।