গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন তদন্ত কমিটির
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে পদে পদে দুর্নীতি ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের তথ্য পেয়েছে তদন্ত কমিটি। শুধু তাই নয়, সুনামগঞ্জে কর্মরত থাকাবস্থায় ছোট বোনজামাইয়ের নামে ঠিকাদারি লাইন্সেসের অনুকূলে কাজ দিতে দফায় দফায় পিপিআর ও প্রধান প্রকৌশলীর নির্দেশনাও অমান্য করেছেন তিনি। বিধিবিধান লঙ্ঘন করে যে লাইসেন্স দিয়ে বোনজামাইয়ের জন্য জহিরুল ইসলাম কাজ ভাগিয়ে নিয়েছেন, সে বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে গোপন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত ‘বোনজামাইয়ের নামে ঠিকাদারি লাইন্সেস, একচেটিয়া কাজ হাতিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু অভিযুক্ত জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর বুধবার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ধাপ হিসাবে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলার সুপারিশ অনুযায়ী বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে। তিনি সেখানে দোষী সাব্যস্ত হলে বিধিবিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটিই নিয়ম।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলে এবং আত্মীয় হিসাবে তিনি বিধিবহির্ভূত কোনো সুবিধা দিয়ে থাকলে বিভাগীয় মামলায় সে বিষয়টি নিশ্চয় আমলে নেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেবে না।’
তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশের এক স্থানে বলা হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম সুনামগঞ্জে দফায় দফায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর বিধি ১০(১)ক এবং প্রধান প্রকৌশলীর পাঠানো পরিপত্রের নির্দেশনা সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন। জরুরি কাজের ৮টি প্যাকেজে সরাসরি অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। সর্বনিু দরদাতাকে কৌশলে বাদ দিয়ে এমটি এন্টারপ্রাইজকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া করেছেন। এমনকি এমটি এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ নিতে সওজের সিলেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর স্মারক জালিয়াতি করা হয়। এমন পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম অসদাচরণের অপরাধ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ১৪ জুন তারিখ উল্লেখ করে সিলেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের ১২৪২নং স্মারক জালিয়াতি করেন জহিরুল ইসলাম। তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে এমটি এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকার কাজের কার্যাদেশ প্রদান করেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীকেও অবহিত করা হয়। এরপর বাধ্য হয়ে এই কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্মারক জালিয়াতির ঘটনায় কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি। এমনকি এই টাকাও আর সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়া হয়নি। রাস্তায় জরুরি মেরামত দেখিয়ে ওই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে কয়েক দফায় শোকজ করা হয়। এরপর ১১ মার্চ তাকে মাদারীপুরে বদলি করা হয়। ২৮ মার্চ ভেঙে পড়ে পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কে কুন্দানালা ব্রিজের ৫টি গার্ডার। ১৬ মার্চ ওই আদেশ আবার স্থগিত করে ৩০ জুন পর্যন্ত তাকে সুনামগঞ্জে বহাল রেখে পরবর্তী সময়ে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। বর্তমানে এই জেলায় কর্মরত আছেন।
এদিকে এমটি এন্টারপ্রাইজের মালিক মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক গোপন করেই একটি দায়সারা প্রতিবেদন দিয়েছে তদন্ত কমিটি। মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি চাঁদপুর সদরের আশিকাঠি রালদিয়া গ্রামে। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি ও সরবরাহকারীর লাইসেন্সটি তার নামে ইস্যু হয় ২০১৬ সালের ৮ মে। চাঁদপুরের ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, এই মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের ছোট বোনের স্বামী। জহিরুল ইসলামের বাড়িও ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা গ্রামে। মোস্তাফিজুর রহমান সম্পর্কে প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের আপন খালাতো ভাইও।