ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচারের শতাধিক পয়েন্ট

0

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারের শতাধিক পয়েন্ট শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ। আন্তঃদেশীয় মাদক চোরাচালানের জন্য বেছে নেওয়া হয় জায়গাগুলো। এসব রুটে কী কী মাদক পাচার হয় সেই বিষয়ে প্রতিবেশী দেশকে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। পাচারকারীরা যেন এলাকাগুলো দিয়ে মাদক আনা-নেওয়া করতে না পারে সেজন্য ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোকে আরও কড়া নজরদারির অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মণ্ডল বলেন, ‘মাদক পাচার প্রতিরোধে ভারত ও বাংলাদেশ একযোগে কাজ করতে ঐক্যমত হয়েছে। আমরা মাদক পাচারের সীমান্ত এলাকার বিষয়ে ভারতকে জানিয়েছি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।’

 
পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত থেকে আটটি জেলায় ১০ ধরনের মাদক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আটটি জেলায় অন্তত ছয় ধরনের মাদক পাচার হয়। এরপর সেসব ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এগুলো হলো– হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, ট্যাপেন্টাডল, বুপ্রেনাফিন ইনজেকশন এবং এস্কাফ সিরাপ।
সাতক্ষীরার ১০ সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় মাদক

সাতক্ষীরা জেলার সঙ্গে লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী আমুদিয়া, গারোবরদা, হাকিমপুর, তারাইল, সোনাডাঙ্গা, চাঁপাতলা, হিঙ্গলগঞ্জ, বকরা, হাসনাবাদ এবং চরাখালীর বিস্তীর্ণ এলাকা। এসব জায়গা থেকে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা কুশখালী, বৈকারি, ভাদিয়ালী, কালিগঞ্জ, শেরপুর, চান্দিপুর, ভোমরা, কাকডাঙ্গা, নোংলা, শহলপুর, বসন্তপুর ও কৈখালী দিয়ে হেরোইন ও ফেনসিডিল পাচার হয়।
 
পশ্চিমবঙ্গের ৭ সীমান্ত দিয়ে যশোরের পাঁচ সীমান্তে ফেনসিডিল ও হেরোইন

পশ্চিমবঙ্গের সাতটি সীমান্ত দিয়ে যশোরের পাঁচ সীমান্তে আনা হয় হেরোইন ও ফেনসিডিল। পশ্চিমবঙ্গের চম্পাপুকুর, বনগাঁ, পেট্রোপোল, হেলেঞ্চা, ভবানীপুর, রানাঘাট, অমৃতবাজার, নানচাপোতাসহ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে এগুলো আসে। মাদক ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই সেসব ছড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের ভেতরে।

 
কৃষ্ণনগর ও নদীয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় হেরোইন ও ফেনসিডিল
ভারতের কৃষ্ণনগর এবং নদীয়া সীমান্ত দিয়ে হেরোইন ও ফেনসিডিল আসে চুয়াডাঙ্গার কাপাসডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবন নগরে। এসব এলাকায় বিজিবির হাতে প্রায়ই মাদক ধরা পড়ে।
মুর্শিদাবাদ সীমান্ত থেকে রাজশাহীতে ট্যাপেন্টাডল

ভারতের মুর্শিদাবাদ সীমান্ত এলাকা থেকে পাচার হয়ে রাজশাহীতে ছড়িয়ে পড়ছে ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। মুর্শিদাবাদের রাজানগর, আজিমপুর, উদয় নগর, সাগরপাড়া, রঘুনাথপুর, জগিরপাড়া, রামচন্দ্রপুর, লালগোলা এবং জুলজি থেকে রাজশাহীর সীমান্তে এই মাদক আনা হয়। এরপর রাজশাহীর সোনাইকান্দি, হরিপুর, কাশিডাঙ্গা, শাহানপুর, আলাইপুর, বাগা, মুক্তারপুর এবং চড়ঘাট দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নিয়ে আসে পাচারকারীরা। হেরোইন আর ফেনসিডিল আনারও বড় রুট এসব সীমান্ত।
পশ্চিমবঙ্গের ৬ সীমান্ত দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার ধরনের মাদক

পশ্চিমবঙ্গের মোহাব্বাতপুর, মল্লিক সুলতান, নাজিরখালি, গোপালনগর, বাজিতপুর, সাবঘাট ও নূরপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিরণগঞ্জ, বোলাহাট, কানসাট, আজমতপুর, চাকপাড়া, কামালপুর, শিয়ালমারা, ভাটিয়া বিল, তেলকুপি, রগনাথপুর, ওয়ায়েহদপুর, জহুরপুর টেক এবং ফতেহপুর দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিভিন্ন ইনজেকশনসহ পাঁচ ধরনের মাদক পাচার হয়।
ভারতের ৪ সীমান্ত দিয়ে জয়পুরহাটে দুই ধরনের মাদক

পশ্চিমবঙ্গের ঘোষাইপুর, গয়েশপুর, চিংগিশপুর, কিসমত ও রামকৃষ্ণপুর সীমান্ত এলাকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের আতাপাড়া, রামকৃষ্ণপুর, পঞ্চবিবি ও ধরঞ্জি দিয়ে বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন ও ফেনসিডিল পাচার করা হয় বাংলাদেশে।

দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে তিন ধরনের মাদক


পশ্চিমবঙ্গের ইংলিশ বাজার, বালুরঘাট, নীমতিতা, গানগ্রামপুর, বানসীবাজার ও পাতিরাম সীমান্ত থেকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, ফুলবাড়ি, বিরামপুর, হিলি, হাকিমপুর, কামালপুর ও বিরাল সীমান্ত এলাকা দিয়ে পাচার হয় হেরোইন, এস্কাফ সিরাপ, ফেনসিডিল ও বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন।
পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও দিয়ে আসে ফেনসিডিল

পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্ত এলাকায় পশ্চিমবঙ্গের ছোপরা, তিনগাঁও, চাকলাঘর, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর ও দার্জিলিং থেকে আসে ফেনসিডিল, এস্কাফ সিরাপ এবং বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন।

আসাম ও মেঘালয় থেকে পাচার হয় ইয়াবা


দেশের উত্তরাঞ্চলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলায় ভারতের আসাম ও মেঘালয় থেকে ইয়াবা, এস্কাফ সিরাপ, ফেনসিডিল ও গাঁজা আসে। ইয়াবার কিছু চালান মিয়ানমার, আসাম ও মেঘালয় হয়ে বাংলাদেশে আনে পাচারকারীরা। এছাড়া কিছু ইয়াবা ভারতেও প্রস্তুত হয়।

কুড়িগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসে ইয়াবা ও ইনজেকশন


কুড়িগ্রাম সীমান্ত এলাকার রৌমারি ও ফুলবাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয় ভারতীয় মাদক। দেশটির কুচবিহারের গীতলদহ, মেঘালয়ের আমপাতি ও আসামের সীমান্ত এলাকা থেকে আসে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, এস্কাফ সিরাপ, গাঁজা ও বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন।
লালমনিরহাটে মাদক আসে উত্তর কুচবিহার থেকে

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর কুচবিহার এলাকা থেকে লালমনিরহাটের বুড়িরহাট, শ্রীরামপুর, দহগ্রাম সীমান্তে মাদক আসে। সুযোগ বুঝে এগুলো বাংলাদেশে পাচার করা হয়। এসব সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, বুপ্রেনরফিন ইনজেকশন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও হেরোইন আনে চোরাকারবারিরা।
মেঘালয় থেকে ময়মনসিংহে হাতে তৈরি মদ

ভারতের মেঘালয় এলাকায় হাতে তৈরি মদ ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়। এছাড়া প্রচুর পরিমাণ গাঁজা আনার জন্য এসব এলাকা বেছে নেয় পাচারকারীরা।
নেত্রকোনা দিয়ে আসে শুধুই গাঁজা

মেঘালয়ের দক্ষিণ গারো হিলস এলাকার বাঘমারা সীমান্ত দিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও কমলকান্দায় পাচার করা হয় গাঁজা।
আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম থেকে সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লায় পাঁচ ধরনের মাদক

আসামের করিমগঞ্জ, মোহনপুর, হিলারা, বিলগঞ্জ এলাকা থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ, চুনারুঘাট ও মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে গাঁজা, ভারতীয়দের হাতে তৈরি মদ ও ইয়াবা পাচার হয়।

পশ্চিম ত্রিপুরার সোনাপুর, রামনগর, হিরণখোলা, তেগুনা, বাগলপুর এবং আগরতলার নারায়ণপুর, জয়নগর, বাতলা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আকবরপুর, কয়াপানিয়া, আনোয়ারপুর, আখাউড়ার আজমপুর, বিজয়নগরের হরসপুর সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয় ফেনসিডিল, এস্কাফ সিরাপ ও গাঁজা।

কুমিল্লার সূর্যনগর, গোলাবাড়ি, কেরানীনগর, গাজীপুর, মাদারী, রাজেশপুর, কালিকাপুর ও বসন্তপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে পশ্চিম ত্রিপুরা থেকে আসে গাঁজা, এস্কাফ সিরাপ, ইয়াবা ও ফেনসিডিল।

ফেনীতে দক্ষিণ ত্রিপুরার গাঁজা ও ফেনসিডিল


ফেনীর জোয়ারকাশা, তারাকুসা, নওপুর, বাসানাতপুর, গুতুমা, চাম্বুকনগর ও কুর্মিটোলা সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ ত্রিপুরার মাধবনগর, জগতপুর কমলনগর, রাজনগর, দেবপুর, কৃষ্ণনগর, গুরুঙ্গা বাজার ও শেরপুর থেকে পাঠানো মাদক বাংলাদেশে পাচার হয়। এসব সীমান্ত দিয়ে গাঁজা ও ফেনসিডিল আসে।
তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com