প্রণোদনার ঋণ জালিয়াতি
করোনা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ প্রেক্ষাপটেই সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা ঋণের ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু প্রণোদনার এই ঋণ নিয়ে বেশকিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠান বড় ধরনের জালিয়াতি করেছে বলে খবর বেরিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ঋণের মোটা অঙ্কের টাকা নগদ আকারে তুলে নিয়েছে এবং এই অর্থ কোথায় কীভাবে খরচ হয়েছে, এর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। উত্তোলিত অর্থ সংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, এ বিষয়েও কোনো তথ্যপ্রমাণ দেখাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে, নগদ টাকা কোথায় গিয়েছে, এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোরালো কোনো তদন্ত হচ্ছে না। ফলে প্রণোদনা নিয়ে জালিয়াতির পুরো চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রণোদনার ঋণ নিয়ে জালিয়াতির ব্যাপারে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য। এর শর্তও ছিল, এ অর্থ শুধু সংশ্লিষ্ট শিল্পের চলতি মূলধন হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু এই শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। তাদের মতে, যেসব ব্যাংক শর্ত ভঙ্গ করে ঋণ দিয়েছে এবং যারা এই ঋণ অন্য খাতে নিয়েছে, দুই পক্ষেরই শাস্তি হওয়া উচিত। একইসঙ্গে নগদ যেসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো কোথায় কীভাবে স্থানান্তরিত হয়েছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত। আমরা অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকারদের এসব কথার সঙ্গে একমত পোষণ করি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা বলছে, তার বাস্তবায়নও জরুরি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রণোদনার নীতিমালা অনুযায়ী, প্রণোদনার ঋণের সুদ বাবদ সাড়ে ৪ থেকে ৫ শতাংশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ভর্তুকি হিসাবে জোগান দেওয়া হচ্ছে; কিন্তু যারা ঋণ নিয়ে তা অপব্যবহার করেছেন, তারা সুদের ভর্তুকি পাবেন না। অর্থাৎ তাদেরকে ৯ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে।
প্রণোদনার ঋণের টাকা নগদ আকারে উত্তোলনের পর সেই টাকার একটি অংশ শেয়ারবাজারে গেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কিছু টাকা ভোগবিলাসেও খরচ হয়ে থাকতে পারে, দেশের বাইরেও পাচার হতে পারে। আমরা মনে করি, পুরো বিষয়টির বিশদ তদন্ত হওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী কোনো একক হিসাব থেকে একদিনে ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ নগদ আকারে তোলা হলে ক্যাশ ট্রানজেকশন রিপোর্ট বা নগদ লেনদেন প্রতিবেদন আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে জমা দিতে হয়। প্রণোদনার ঋণের ক্ষেত্রে ১০ লাখের বেশি টাকা অনেক গ্রাহক নগদ আকারে তুলে নিয়েছেন; কিন্তু তারা আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটে এর প্রতিবেদন পাঠায়নি। এটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। এ অপরাধেরও উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।