নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে প্রয়োজনে একে-৪৭ ব্যবহার হবে
আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীকে জেতাতে প্রয়োজনে একে-৪৭ (অত্যাধুনিক রাইফেল) ব্যবহার করা হবে-এমন হুমকি দিয়েছেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি একটি হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি, এখন জামিনে আছেন।
শুক্রবার বিকালে বাজিতপুর উপজেলার হুমাইপুর ইউনিয়নের টান গোসাইপুর গ্রামের ‘হুমাইপুর ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসা’র মাঠে নির্বাচনি জনসভায় আব্দুল্লাহ আল মামুন এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়ার সমর্থনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে হুমাইপুরের চৈতনপুর ও নামা গোসাইপুর গ্রাম এলাকার অজ্ঞাত পরিচয়ের দুর্বৃত্তরা রাস্তায় ঝোলানো দলীয় প্রতীক নৌকা পুড়িয়ে দেয়। এর প্রতিবাদে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জানান, প্রকাশ্য জনসভায় মাইকে বক্তব্য দিতে গিয়ে ওই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো চেয়ারম্যানের ভোট হবে না।
নৌকা মার্কার ভোট হবে ওপেন টেবিলে। অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেব। ওইদিন আমরা শুধু আমাদের হুমাইপুরের জনগণের শক্তি নিয়ে আসব না।
আমরা শুধু একে-৪৭ নয়, প্রয়োজনে যা যা দরকার তা নিয়ে আমাদের প্রার্থীকে পাশ করাতে আসব। আব্দুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের, পুলিশ আমাদের, সরকার আমাদের। আর কিছু বলার দরকার আছে?’
আওয়ামী লীগ নেতার এমন হুমকিতে ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ না হওয়া শঙ্কায় আছেন তারা।
হুমাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মো. আরিফুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ধনু মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন, বাজিতপুর পৌর আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আকবর, সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হোসাইন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আব্দুল্লাহ আল মামুন মেম্বার প্রার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এজেন্টদের বলে দেবেন, নৌকার ভোট কাইত্যার তলে (পার্টির আড়ালে) হবে না, নৌকার ভোট হবে সবার সামনে। কোনো মেম্বার প্রার্থীর এজেন্ট বিরোধিতা করলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বের করে দেব।’
একইভাবে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনি সভায় অংশ নিয়ে ভোটার ও অন্যান্য স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি হুমকি প্রদান করেন।
বলেন, নৌকার ভোট প্রকাশ্যে দিতে হবে, গোপনে নয়। নির্বাচনের তিন দিন আগে থেকে এমন পরিস্থিতি করা হবে যে, এসব চেয়ারম্যান প্রার্থী এলাকায় ভোট চাইতে বের হতে পারবে না।
পিবিআই কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজিতপুর পৌর শহরের বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী উমর চান ওরফে সাচ্চু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে পিবিআই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।
ওই অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা আসামি হিসাবে আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রয়েছে। এ মামলায় পিবিআই গত বছরের ১১ নভেম্বর মামুনকে গ্রেফতার করার পর তিনি প্রায় চার মাস হাজত খেটে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
১১ নভেম্বর বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।