এগোচ্ছেন মমতা, অগোছালো বিজেপি
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তারপর ব্যাপক উদ্যোমে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভিনরাজ্যে সরকার গঠনের চিন্তাভাবনা শুরু করে দলটি। পাশাপাশি ২০২৪ সালে দেশজুড়ে মোদিবিরোধী জোটকে সংগঠিত করার লক্ষ নিয়ে এগোচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গকে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার ডাক দিয়ে লক্ষ্যচ্যুত হয়ে দিশেহারা রাজ্য বিজেপি। যতদিন যাচ্ছে আরও অগোছালো হয়ে পড়ছে তারা। বিধানসভার পর যতগুলো কেন্দ্রে ভোট হয়েছে সেখানে ব্যাপকভাবে পর্যদুস্ত গেরুয়া বাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী মোদির আহ্বানে সামিল হওয়া তৃণমূলত্যাগীরা আজ ‘ঘর ওয়াপসিতে’ ব্যস্ত। ভোটের আগে বার বার অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, ২০০-র বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা থেমে গিয়েছিল ৭৭-এ। আর ভোটের পর দলবদলের জেরে এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭০।
গত আগস্টে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে সংগঠনের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়ে। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে দলের হতাশাজনক ছবিট স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার হিড়িক ক্রমেই বাড়ছে। আদি বিজেপির অনেকেই কার্যত বসে গেছেন। অনেকেই এখনও সক্রিয় হতে পারেননি। এর জেরে দলের দুর্বলতা ক্রমেই প্রকাশ্যে আসছে।
রাজ্যে বিজেপি ঝিমিয়ে পড়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে বিজেপির এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘ঝিমিয়ে পড়ার কারণ হলো– যদি দলের মাথায় এমন কেউ বসেন যার কোনও অভিজ্ঞতায় নেই, যার কোনও আইডিয়া নেই কীভাবে দল চালাতে হয়। মাত্র দু’বছরের অভিজ্ঞতায় একটা সর্বভারতীয় দলের প্রদেশ কমিটি চালানো অসম্ভব। তাই মাথা যদি ঘুমিয়ে থাকে, দলও ঝিমিয়ে পড়বে। রাজ্য বিজেপিতে যোগ্য নেতৃত্বের বড় অভাব। দক্ষ কোনও পরিচালক নেই যিনি এই সংকটে দলকে টেনে তুলতে পারেন। দিলীপ ঘোষ থাকতেও যা হয়েছে, এখনও তাই হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা কোনও পরিবর্তন দেখতে পারছেন না। মানুষ বিজেপির প্রতি হতাশ হচ্ছে, উৎসাহ হারাচ্ছে। কারণ সেই দিলীপ ঘোষকে নিয়ে জেলা সফরে যাচ্ছেন রাজ্য সভাপতি। নতুন কোনও বার্তা যাচ্ছে না।’
এই নেতা আরও বলেন, ‘রাজ্য সভাপতির পরিবর্তন হলো। কিন্তু রাজ্য থেকে মন্ডল স্তর পর্যন্ত কমিটি পুর্নগঠনের কোনও লক্ষণ নেই। সেজন্য তারাও কোন কাজ করছেন না। বঙ্গ বিজেপি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় আছে। এতে আম জনতার কাছে কোনও প্রভাব পড়ে না। আন্দোলন কোথায়? আর ঠিক এই কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে বিজেপি। এর সুবিধা নিচ্ছে তৃণমূল। বিজেপির এই ঝিমিয়ে পড়ার কারণেই ভিন রাজ্যে তৃণমূল নিজেদের সংগঠন বাড়ানোর দিকে নজর দিতে পারছে।’
বিজেপির এই ছন্নছাড়া দশা নিয়ে বারবার সরব হয়েছেন প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের টার্গেট করেছেন বার বার। সব দায়ভার তিনি চাপিয়েছেন কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের ওপর। তথাগত বাবু প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘কৈলাশকে আমি এখনও ঘৃণা করি। আমার ঘৃণা কমবে না।পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির জন্য সর্বভারতীয় স্তর থেকে নির্দেশ আসতে দেরি হচ্ছে। এটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমার মনে হয় বিজেপির খারাপ সময় চলে যাচ্ছে। যাদের যাওয়ার ছিল তারা বোধহয় এবার বিদায় নিচ্ছেন।’
বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের রাজ্য নেতা সুজিত শিকদার বলেন, ‘বর্তমানে দিশেহারা অবস্থা বঙ্গ বিজেপির। নতুন রাজ্য সভাপতি হালে পানি পাচ্ছেন না। আগের সভাপতি নাক গলাচ্ছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত কৈলাশ বিজয়বর্গীয়র মতো নেতারা সরে গিয়ে দক্ষ কোনও কেন্দ্রীয় নেতা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব আসছেন ততক্ষণ এই অবস্থা চলবে।’