৭১’র মতো ঐক্যবদ্ধভাবে দানব সরকারের পতনে গণআন্দোলন করতে হবে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোর করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সবার সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আজকে জেগে ওঠবার সময় হয়েছে। এই ভয়াবহ ও দানব সরকারকে সরাতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন করতে হবে।
গতকাল রোববার, অক্টোবর ৩১, ২০২১, বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, ছাত্রলীগের (জেএসডি) সভাপতি তৌফিকুজ্জামানসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে সবাইকে শরিক থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। যেভাবে আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করতে সম্মিলিতভাবে লড়াই করেছিলাম। যে স্বপ্ন ও আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম যে আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। ভোটের অধিকার ও বাসস্থান এবং সভা সমাবেশের নিশ্চয়তা থাকবে। কিন্তু সেটাও হয়নি। দেশ স্বাধীনের পরপরই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তারা সেসময় রক্ষী বাহিনী গঠন করে প্রায় ত্রিশ হাজার তরুণ কিশোরকে হত্যা করেছিল। সংবিধানকে নিজের মতো সাজিয়ে সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিল। তারা সবার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। তাদের দুঃশাসনে সেসময় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।
মির্জা আলমগীর বলেন, আজ ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোর করে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সবার সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। আজ দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে এই সময়ও তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। রবিবার দুপুরে রাজধানীর নাখালপাড়ায় একটি গুম পরিবারের সদস্যদের পাশে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিল আমাদের নেতারা। কিন্তু সরকারের পেটোয়া বাহিনী সেখানেও আক্রমণ করেছে। সেখান থেকে ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।
বিএনপি মহাসচিব সবার উদ্দেশ্যে বলেন, এই একনায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আবারো জেগে উঠবার সময় হয়েছে। ভাত ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে আমাদেরকে ফের রাস্তায় নেমে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ভয়াবহ দানব আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে একটা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে আ স ম আব্দুর রব বলেন, আজকে তরুণ যুবকদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার সময় হয়েছে। আমরাও সে বয়সে যুদ্ধ করেছিলাম। আপনারা এখন রাস্তায় এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নামলে আমিও মরতে রাজি আছি। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তিনি শোনেননি। দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেছে আওয়ামী লীগ। তারাই প্রথম দেশে মার্শাল ল জারি করেছিল। দায় তাদেরকে নিতে হবে। আমরা প্রথম ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন না করলে আজকে আমাদের পরিচয় হতো পাকিস্তানি হিসেবে। বর্তমানে কাউকে না কাউকে মার খেতে হবে, জেলে যেতে হবে। তা না হলে হবে না। স্বৈরাচার বিদায়ের জন্য দরকার জাতীয় ঐক্য।
তিনি বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনগণ এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকার দেখতে চায়। কারণ আওয়ামী লীগ দেশকে আজ মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে। নৈতিকভাবে ধ্বংস করেছে। সর্বস্তরের লুটপাট চলছে। সব প্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব চলছে। সবকিছু শেষ করে দিয়েছে তারা। আমরা আজ জালিমের দেশে বাস করছি। অন্যায় অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে চলবে। সেইসাথে সবার সমন্বয়ে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।