আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিএনপিশূন্য’ করতে চায় সরকার: মির্জা ফখরুল

0

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘বিএনপিশূন্য’ করতে সারাদেশে নানান রকম কাণ্ডকারখানা শুরু করেছে সরকার। এমন অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সমস্ত পরিসরকে সংক্ষিপ্ত করে ফেলছে। ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর থেকে বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের পরিসরকে একেবারে সংকীর্ণ করে ফেলছে। সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এখানে বিরাজনীতিকরণের একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রধানবিরোধী দল বিএনপিকে নির্মূল করার একটা নীলনকশা তারা করেছে।

তিনি বলেন, এর ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে সরকার একতরফা নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে আগের রাতে নির্বাচন করে জনগণের মতামত বাতিল করে একটা প্রতিনিধিত্বহীন সংসদ গঠন করেছে, যার সাথে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন থেকেই একই কায়দায় বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, মামলা ও বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। সহিংসতা সৃষ্টি করছে তারা, তাদের লোকজন ও পুলিশ। সেখানে তারা মামলা দিচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। এভাবে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ও নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা
রাজধানীর উত্তরের দিকে এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ২৬ অক্টোবরে ভাটারায় বিএনপির কর্মী সভায় পুলিশের হামলা হয়। ২৩ অক্টোবর উত্তরখানে বিএনপির কর্মীসভা পণ্ড হয় পুলিশি বাধায়। ১২ সেপ্টেম্বর খিলক্ষেত থানার বিএনপি নেতার বাসায় ফরম বিতরণের সময় পুলিশ হামলা করে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

‘গণতন্ত্র দেয়ার আওয়ামী লীগ কে?’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পত্রিকায় দেখলাম ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে গণতন্ত্র তারা না দিলে আমরা নাকি সমালোচনা করতে পারতাম না। গণতন্ত্র দেয়ার তারা কে? এই অধিকার আমরা মুক্তিযুদ্ধের সময় রক্ত দিয়ে অর্জন করেছি। পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের জন্য আমরা আরো লড়াই করেছি।

ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চিরকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করেছে। সেটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য বারবার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য, নির্মূল করার জন্য, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, হত্যা – সবকিছু করছে। এটাকে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা যাবে না। এটা ভয়ঙ্করভাবে একটা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে তারা মিথ্যা মামলায় দিয়েছে। এটা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দিয়েছে।

সরকার কি ইঙ্গিত পেয়েছেন বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দেশে বিরোধীদল শূন্য একটা অবস্থা তৈরি করতে চায়। যারা রাজনীতি করছেন বা নির্বাচনের সময় নির্বাচন করতে পারেন, সরকারের দাবিতে আন্দোলন করতে পারেন, সেটা কি বাধা দেয়ার জন্য সরকার এসব‌ করছে? এটা সরকারের চিরাচরিত ধারণা বা ভীতি। বিএনপিকে কোনো মতেই নির্বাচনের কাছে আসতে দেয়া যাবে না। বিএনপিকে নির্বাচনের আশপাশে আসতে দিলেই তারা জানে যে সামনে নির্বাচনে তাদের ক্ষমতায় আসা সম্ভব হবে না।

‘বর্তমান রাজনৈতিক যে অবস্থা আছে তাতে আমরা কোনোমতেই নির্বাচনে যাব না। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না,’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষের ন্যূনতম অধিকার নেই। মিলাদ করা তো একটা ধর্মীয় অধিকার। এই ধর্মানুষ্ঠান করার অধিকার সংবিধান আমাদের দিয়েছে। সংবিধান অধিকার দিয়েছে সভা করতে, মিছিল করতে। সাংবিধানিক অধিকার সরকার হরণ করে নিচ্ছে। অর্থাৎ এই সরকার সংবিধানের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার অর্জনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

রোববার দুপুরের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব, তেজগাঁও মহানগরীর নেতাকর্মীরাসহ আমরা শাহীনবাগে বাদ জোহর একটি মিলাদে অংশ নেই। মিলাদ শেষে গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের অসুস্থ মাকে আমরা দেখতে যাই। ওই সময় সুমনের বাড়ির চারিদিকে শতাধিক ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে অর্ধশতাধিক পুলিশ ঘিরে ফেলে। দরজা খুলে ঢুকে তারা নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর ও গ্রেফতার করে। আমরা প্রতিবাদ করি কেন এসব করছেন? আমরা তো মিলাদে এসেছি। অসুস্থ মাকে দেখতে এসেছি। কিন্তু কোনো কথাই তারা মানবে না। ওসি অপূর্বের নেতৃত্বে ঘটনাটি ঘটেছে।

আমান বলেন, প্রায় ১৫ জন নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এই গ্রেফতার কেন? আমাদের কি গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। আমরা কি মিলাদ করতে পারব না? এটা কি নিষিদ্ধ? ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণে কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করতে পারছেন না।

রোববার দুপুরে বিএনপি নেতা সুমনের বাসায় অভিযান চালিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, সহ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, যুগ্ম-আহ্বায়ক আতাউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com