আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে বিএনপির নাম জড়াচ্ছে: মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ সরকার সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটিয়ে বিএনপির নাম জড়িয়ে, জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ খালি করতেই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আপনারা দেখেছেন যে নির্বাচনের ৭/৮দিন আগে থেকে তারা এমনভাবে মিথ্যা, সাজানো, গায়েবী মামলা দেওয়া শুরু করলো যে, প্রার্থীসহ কর্মীদের গ্রেফতার করা হলো। সকল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে মাঠ খালি করে আগেরদিন রাতে ভোট করে নিয়ে যাওয়া হলো। এবার তারা আগে থেকেই অতিদ্রুত মামলাগুলো শেষ করতে চায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তালিকা করেছে এসব মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে এবং নেতারা যেন নির্বাচন করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বুধবার (২৭অক্টোবর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্গাপূজার উৎসবকে কেন্দ্র করে সারাদেশে যে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে, অনেকগুলো পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ গুলি করেছে কয়েকজন মারা গেছে। এই ঘটনাগুলোর ফলে বরাবর যেভাবে সরকার বেআইনী ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য নীল নকশার মাধ্যমে প্রতিপক্ষ বিরোধীদলকে ঘায়েল করতে চায়। এখন বিএনপিকে নির্মূল করতে চায়। আপনারা দেখেছেন যেকোনো ঘটনা ঘটলেই সত্য-মিথ্যা সাজিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে দেওয়া হয়। এবারও দেখলাম গ্রেফতার বাণিজ্য করার জন্য প্রকৃত অপরাধীরা যেন ধরা না পরে সেজন্য অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয়া হলো।
প্রত্যেকটি ঘটনায় সরকারি দলের ইন্ধন রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রংপুরে দেখা গেলো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা এ ঘটনার সুত্রপাত ঘটিয়েছে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। চারটি মামলায় ৪১জনকে আসামী করা হয়েছে। কুমিল্লায় পাগল ইকবাল বলে একজনকে সাজিয়েছে। বলা হচ্ছে সে নাকি কোরআন শরীফ নিয়ে মণ্ডপে রেখেছে। যেগুলো কোনোমতে বিশ্বাসযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, আমি প্রথম দিন থেকে বলেছি সরকারের এজেন্সিগুলো দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটা করেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের ভাতের সংকট, ভোটের সংকট, বাকস্বাধীনতার সংকট, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধির সংকট, এসব থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে।
চৌমুহনীতে ২৩টি মামলায় ৭হাজার ৯৬১কে আসামী করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই মামলা শেষ হবে কবে? এগুলোতো শেষ হবে না। উদ্দেশ্য হলো-এই মামলাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে তাদেরকে হয়রানি করা এবং একটা বড় গ্রেফতার বাণিজ্য করা।
পূজামণ্ডপ ভাংচুরের ঘটনায় মোট ৬০টি মামলায় ১৫হাজার ৯৬জন আসামী করা হয়েছে তথ্য দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপির ১৪৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে ভাল করে জেনে গেছেন যে, এই ঘটনাগুলোর পেছনে সরকারের প্রত্যক্ষ মদদ আছে। তারা তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতির মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করছে এবং আমাদের মধ্যে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে সেটা বিনষ্ট করছে।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই বরকত উল্লাহ বুলুসহ বিএনপির যেসব নেতাকর্মীর নামে এসব মামলা দেওয়া হয়েছে তাদের এই ঘটনার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই। এই মামলাগুলো দিয়েছে শুধু তাদেরকে হয়রানি করা, রাজনীতি থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করা, আসন্ন নির্বাচনের পূর্বেই যেন বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে একদম সরিয়ে দেওয়া যায়, মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে, এজন্যই এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
সমস্ত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ছেড়ে দিতে হবে এবং সুষ্ঠূ তদন্তের মাধ্যমে যারা দায়ি তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। বিএনপি সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে।
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভারের পিলারে ফাটল ও পাটুরিয়ায় ফেরী ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপণা ও নজরদারির অভাবে এসব ঘটনাগুলো ঘটছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহবায়ক আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মনজু প্রমুখ।