সরকারের পরিচয় এখন গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া, বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন দেখেনি, যারা রণাঙ্গনের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেনি, তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে চিনতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক। যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন দেখেনি, তাদের মন্ত্রী সভায় মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর তাজউদ্দীন আহমেদের ঠাঁই হবেনা, এটাই স্বাভাবিক।

গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট ২০২১) বিএনপির স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে ‘২৮ আগস্ট ১৯৭১: জিয়াউর রহমান কর্তৃক রৌমারীতে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বেসামরিক প্রশাসনের উদ্বোধন’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া রণাঙ্গনে যেমন ছিলেন একজন সফল অধিনায়ক, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশে সরকার পরিচালনায়ও ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্র নায়ক। রাষ্ট্র পরিচালনায় তার সকল কর্মকান্ডে সমুন্নত ছিল, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায় বিচার। তাই, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া ইতিহাসের পাতায় অবিনশ্বর। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তার কর্মের মাধ্যমে। তিনি জনগণের হৃদয়ে ভাস্বর ‘গর্জনে’ নয় ‘অর্জনে’। স্বাধীনতার ঘোষককে জানতে হলে, বুঝতে হলে কারো সঙ্গে তুলনা দেয়ার প্রয়োজন নেই। জিয়াউর রহমান মানেই বাংলাদেশ, জিয়াউর রহমান মানেই গণতন্ত্র।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ৫ মাস/ সাড়ে ৫ মাসের মাথায় ১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, কুড়িগ্রামের রৌমারীতে যে স্বাধীন প্রশাসনের উদ্বোধন করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশে, এটি ছিলো শহীদ জিয়ার সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বে রৌমারীতে স্বাধীন প্রশাসন প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাহস ও বীরত্বের একটি অনন্য উদাহরণ। এ কারণে, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘রৌমারী’ আমাদের নির্ভরতা ও সাহসের ভিত্তিভূমি হিসেবে চিত্রিত থাকা উচিত। জনগণের রায়ে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে, ‘রৌমারীকে’ দেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কর্মকান্ড পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে। প্রয়োজনে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রৌমারীতে স্থানান্তর করা হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শুধু রৌমারী নয় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের আওতায় স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেহেরপুরের আম্রকানন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের মতো সকল এমন ঐতিহাসিক স্থানগুলোকেও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিদুতে পরিণত করা হবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের এমন প্রতিটি ঐতিহাসিক স্থান মুক্তিযুদ্ধের এক একেকটি জীবন্ত ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের এইসব ঐতিহাসিক স্থানগুলোকে স্বমহিমায় তুলে ধরা গেলে যারা মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন দেখেনি তারা আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ঔদ্ধত্য দেখানোর সাহস পাবেনা।

তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষকের হত্যাকাণ্ডের পরপরই যে ব্যক্তি বোরকা পরে সীমান্ত পাড়ি দিতে চেয়েছিলো, ‘জিয়াউর রহমান কোথায় যুদ্ধ করেছিল’ তার এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, আওয়ামী জাহেলিয়াতের এই সময়ে র্যাব পুলিশের বন্দুকের নল উঁচিয়ে, আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে কিংবা সীমান্তের ওপারে ফেলে আসার ভয় দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে চলছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শক্তি সামর্থ কিংবা বয়স থাকা সত্ত্বেও যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি, যারা রণাঙ্গনের ভয়াবহতা দেখেনি, মুক্তিযুদ্ধে বন্দুক চালানো দূরে থাক ঢিল মারারও সাহস করেনি, তারা এখন ঘরে বসে নিরাপদে মুক্তিযুদ্ধে ফরমায়েশি ইতিহাস লিখছে।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষকের দল। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল, সুতরাং, স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার-অপপ্রচার করে লাভ নেই। ‘অতীত নিয়ে সবসময় পড়ে থাকলে তোমার এক চোখ অন্ধ; অতীতকে ভুলে গেলে তোমার দুই চোখই অন্ধ”, এমন একটি প্রবাদ বাক্যের উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, যারা অন্ধ নয়, সময়ের পরিক্রমায় ইতিহাসের সত্য উদ্ভাসিত হয়, হবে আপন আলোয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ক্ষমতার লোভে আওয়ামী লীগ নামক দলটি এখন একটি দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে জনবিচ্ছিন্ন এই দলটি এখন কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা আর র্যাব-পুলিশের ইউনিফর্ম পরা কিছু পেশাদার খুনির উপর নির্ভরশীল একটি দুষ্ট চক্র। আর আন্তর্জাতিক মহলে নিশিরাতের সরকারটির পরিচিতি হলো, গভর্নমেন্ট অফ দ্যা মাফিয়া, বাই দ্যা মাফিয়া, ফর দ্যা মাফিয়া। সুতরাং, আওয়ামী লীগ এখন নিজেদের দলটিকে একটি রাজনৈতিক চরিত্র দেয়ার জন্যই কারণে-অকারণে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিএনপির নাম উচ্চারণ করতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তারেক রহমান বলেন, একটি রাজনৈতিক দল একটানা প্রায় একযুগ ক্ষমতায় থাকার পর প্রতিদিন অন্যের সমালোচনার পরিবর্তে এতদিনে তাদের নিজেদের সাফল্যের কথা বলতে পারা উচিত। অথচ তাদের মুখে সারাদিন দিন – সারাবেলা তাদের শীর্ষ নেতাদের মুখে স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধে সমালোচনা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনা, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বিএনপির বিরুদ্ধে সমালোচনা।

তারেক রহমান আরো বলেন, তাদের একমাত্র সাফল্য গুম খুন অপহরণ-দুর্নীতি-লুটপাট টাকাপাচার আর মিথ্যা অপপ্রচার।

কভিড-নাইন্টিনের অজুহাতে প্রায় দুই বছর ধরে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সমালোচনা করে তারেক রহমান বলেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে দলীয় কর্মসূচি চললেও কোভিডের অজুহাতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরপর আর একদিনের জন্যও খুলেনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, কবিড-নাইন্টিনের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্বের প্রায় সকল দেশকেই বন্ধ করতে হয়েছিল। তবে সব দেশ ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে একমাত্র ব্যাতিক্রম দুইটি দেশ। কভিড-নাইন্টিনের অজুহাতে বিশ্বের যে দু’ একটি দেশ একদিনের জন্যও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেনি সেসব দেশের তালিকায় এক নাম্বারে পানামা। দুই নাম্বারে বাংলাদেশ।

তারেক রহমান বলেন, নিশিরাতের সরকারের কাছে দেশের এমন লজ্জাকর পরিস্থিতির কোনো জবাব নেই, ফলে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে নিতে তাদেরকে মাঝে মাঝে মাঠে ‘পাগলের প্রলাপ’ ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই। স্বাধীনতার ঘোষক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক বক্তব্য-মন্তব্য সেই ‘পাগলের প্রলাপেরই অংশ।

দেশে ভ্যাকসিন সংকটের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক সকলকে টিকা দিতে হলে কমপক্ষে ২৬ কোটি টিকা প্রয়োজন। অথচ এই সরকার এখনো তিন কোটি টিকাও ম্যানেজ করতে পারেনি। নিশিরাতের সরকারের কাছে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত টিকা আছে মাত্র ৬৫ লাখের মতো। অপরদিকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৯০ লাখে মানুষ টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে অপেক্ষায় রয়েছেন।

নিশিরাতের সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পর নাকি অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ৩২ লক্ষ শিক্ষার্থীকে কখন টিকা দেয়া হবে। পর্যাপ্ত পরিমান টিকা কি সরকারের হাতে আছে? তাহলে কবে খুলবে বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশ্ন করেন তারেক রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাফিয়া সরকারের ছলচাতুরির উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য টিকার ব্যবস্থা না করে উল্টো নতুন হুঙ্কার দিয়েছেন নিশিরাতের সরকারের সেতু মন্ত্রী। ভীত-সন্ত্রস্ত ওবায়দুল কাদের বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলে শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের আন্দোলন করবে। এই ভয় তিনি ছাত্রলীগকে ওয়েল-ইকুইপড হয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন।

তারেক রহমান বলেন, এটিই হলো আসল কথা, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এই সরকার দিশেহারা। একটি মাত্র ব্যক্তির ক্ষমতার লোভের কারণে দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি- ধর্মীয়-সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখন শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে পারলে দেশটাকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার এসাইনমেন্ট চূড়ান্ত হবে।

দেশের ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এই সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই।
কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার দাবি নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। শিক্ষার্থীদের এই মৌলিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকবে বলেও থাকবে বলে জানান তারেক রহমান।

বিএনপির সর্বস্তরের নেতা কর্মী সমর্থকদের আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আর অপেক্ষা নয় দেশ বাঁচাতে-মানুষ বাঁচাতে এই মাফিয়া সরকারের হাত থেকে দেশ পুনরুদ্ধারের বিকল্প নেই। দেশকে মাফিয়া মুক্ত করার আন্দোলনে বিএনপিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। কারণ ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং স্বৈরাচারের বিপরীতে দেশ পরিচালনায় বিএনপি-ই সবচেয়ে জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল’।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com