জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে সরাতেই জিয়ার কবর নিয়ে প্রশ্ন তুলছে অবৈধ সরকার: বিএনপি

0

জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে সরাতেই সরকার চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমান কবরের নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘আপনার দাফন হয়েছে, লক্ষ লক্ষ লোক জানাজায় শরিক হয়েছে। তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ (এইচ এম এরশাদ) সাহেব নিজে তার (প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান) বডি ক্যারি করেছেন। ইট ইজ এ ওপেন ক্লিয়ার, ক্লিষ্টাল ক্লিয়ার- এর চেয়ে বড় সত্য কিছু আর হতে পারে না।

সেখানে এই ধরনের ইস্যুগুলো নিয়ে আসা তারা যে কতটা রাজনীতি শূন্য হয়ে গেছে, দেউলিয়া হয়ে গেছে রাজনীতিতে- এটা তার প্রমাণ। আজকে আপনাদেরকে দিয়ে আমাদের কাছে প্রশ্ন করিয়ে সেই কথাগুলোকে আবার সামনে নিয়ে আসা এটা হচ্ছে মানুষের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।’

প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মূল জায়গায়টায় আসে না কেন তারা? যে নির্বাচনটা কীভাবে করবেন, আপনি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে শক্তিশালী করবেন, কীভাবে মানুষের অধিকাগুলো, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেবেন-সেই কথাগুলোর তারা (সরকার) উত্তর দেয় না।

গতকাল আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি জেনারেল ওবায়দুর কাদের সাহেব বলেছেন, আমি নাকি তার কথার উত্তর দেই না। উনি কি পত্রিকা পড়েন? তার প্রত্যেকটা কথা উত্তর শুধু না, আমরা সঠিক সত্যকে তুলে ধরি সবসময়। উনি গতকাল বলেছেন, ছবি দেখাতে। কী বলব বলেন এখন? এসব কথার জবাব দিতে গেলে মানহানি মামলা করবেন। সেই ধরনের কথা আমাদের রুচিতে বাঁধে যে ছবি দেখাতে বলেন, অমুক করতে বলেন। এটা তো কাজ না, পয়েন্ট না। কাম ডাউন। করোনাতে কী করেছেন সেটা বলন, আপনি মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য কী করেছেন সেটা বলেন, দিন আনে দিন খায় মানুষের জন্য কী করেছেন সেটা বলেন, আজকে কেন মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে সেই কথা বলেন। আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি মানুষ ধনী থেকে ধনী হচ্ছে, বড় লোক থেকে বড় লোক হচ্ছে, বিদেশে টাকা পাঁচার করছে। সমাজে এমন একটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে, অসামাজিক কার্যকলাপে ছেয়ে গেছে। কোনও কিছু কাজ করছে না এখানে। ইট ইজ গোয়িং টু দ্য ফেল্ড স্টেট।’

চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ধর্মপ্রাণ মানুষের মনের ভেতরে আঘাত এসেছে যে, জিয়াউর রহমান সাহেবের মাজার সম্পর্কে যেসব কথা তারা বলেছে- এটা সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে নেয়নি। জিয়াউর রহমান তো এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছেন, মনের মধ্যে আছেন। আপনারা যদি কখনো শবে বরাতের রাতে ওদিকে মাজারে (চন্দ্রিমা উদ্যান) যান দেখবেন যে, সাধারণ মানুষরা এসে তার মাজার জিয়ারত করছে।

অযথা উনাকে (জিয়াউর রহমান) নিয়ে টানা, শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে টানা –এগুলো আমরা করতে চাই না। উনারা আমাদের সকলের শ্রদ্বেয় নেতা। তাদের সেই জায়গাতেই রাখা উচিত। এটা জাতির জন্য, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য খুবই দুঃখজনক যে, এদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যাদের অবদান আছে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতা তাদের সম্পর্কে এই সমস্ত নোংরা কথা যখন বলা হয় তখন বুঝা যায় তারা কতটা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে, তাদের কোনও রাজনীতি নেই।’

গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে ‘রুচিহীন’ মিথ্যাচার অভিহিত করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল।

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কখন কী দেন, কিভাবে দেন, কেন দেন- এটা আপনার এখন পর্যন্ত ঠিক আমাদের কাছে বোধগম্য হয়নি। গতকালকে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন- এটা কোনও রুচিবান মানুষ করতে পারে না বলে আমি মনে করি। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে যে, রুচিহীন একটা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ এ ধরনের বক্তব্য মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে তো।’

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ এর কারণে সকল স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থা করছে। দীর্ঘকাল বন্ধের ফলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত চার কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ। বিএনপির ইতিপূর্বে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের টিকা প্রদান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।’

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘উনার (ওবায়দুল কাদের) কথা বুঝা যায়, এতোদিন করোনার কারণে নয়, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কারণে নয়, আন্দোলনকে ঠেকানোর জন্য তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছেন- এটা প্রমাণিত হয়েছে তার কথায়।’

আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরে আইএসআইএল সন্ত্রাসীদের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার স্থায়ী কমিটির সভায় নিন্দা ও নিহতদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হয় বলে জানান মির্জা ফখরুল।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ তু্লে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com