২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’: বিএনপি
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রথম সোপান বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকদের অভিযোগ, বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র রুখে দিতেই এই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি এই গ্রেনেড হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে এক-এগারো’র প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল বলেও দাবি করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিএনপির আয়োজনে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক ধারাবাহিক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দলটির নেতাদের বক্তব্যে এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভার বিষয়বস্তু ছিল ‘একুশে আগস্ট’র চক্রান্তমূলক গ্রেনেড হামলা’। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একুশে আগস্টের হামলা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রথম সোপান ছিল। একুশে আগস্ট সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রহীন করার জন্য, দেশের মানুষের স্বপ্নকে ধ্বংস করার জন্য। এক-এগারো আর একুশে আগস্ট বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা প্রাথমিক পর্ব ছিল।’
ফখরুল বলেন, ‘যেকোনও হত্যা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি দল বিএনপি। যে কারণে আমাদের নেত্রী এর প্রতিবাদ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি, বাঁধা দেওয়া হয়েছে।’ তার অভিযোগ, পরবর্তীকালে মামলার তদন্তেও কোনও রকম সহযোগিতা করা হয়নি।
তিনি বলেন, ‘পুরো জিনিসটা রাজনৈতিক বিষয়। প্রতিহিংসার, চক্রান্তের রাজনীতির বিষয়। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে দেওয়া হবে না—এ কারণেই এই চক্রান্ত। একুশে আগস্ট সাজানো নাটক। সাজানো নাটকের ফলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসে আছে। নির্ধিদ্বায় বলতে পারি, এর পুরো বেনেফিশিয়ারি আওয়ামী লীগ।’
ফখরুল বলেন, ‘আগস্ট মাস আসলেই তারা ইতিহাস বিকৃত শুরু করে। ক্ষমতাসীন দলের সভানেত্রী বিষোদ্গার করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে। তার মাজার সম্পর্কে, একাত্তরের সালের যুদ্ধের বিষয়ে। তিনি হাস্যকর বক্তব্য রেখেছেন। এতে প্রমাণিত,তারা কতখানি প্রতিহিংসাপরায়ণ। ঐতিহাসিকভাবে সত্য, জিয়াউর রহমান রণাঙ্গণে থেকেই যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন।’
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি, এমন দল কখনোই এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা এফবিআই, ইন্টারপোলকে তদন্তে সহযোগিতা করেনি। আর যারা সহযোগিতা করেনি, তারাই ইতিহাস বিকৃত করছে।’
আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘নাটক হলেও মর্মান্তিক নাটক, শেখ হাসিনা গাড়িটিকে তদন্ত করতে দেননি। প্রধানমন্ত্রীর (তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) পক্ষ থেকে সমবেদনা জানাতে গেলেও নাজেহাল করা হয়েছে। একুশে আগস্টের ঘটনা এক- এগারোর ভিত্তিস্থাপন হয়েছিল।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খুনের রাজনীতি বিএনপি করে না। বিএনপি তখন ক্ষমতায়, এটা সাধারণ জ্ঞানের বিষয়। এটা কেন করতে যাবে বিএনপি।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘তারেক রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। জিয়াউর রহমানের পরিবার উদার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে।’
একুশে আগস্ট প্রসঙ্গে টুকু বলেন, ‘মাইনাস টু’র প্রকল্প হিসেবে এই ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয়টি তাদের উদ্ঘাটন করার ইচ্ছা নেই। বিএনপির যে জনভিত্তি, তারেক রহমানের যে জনপ্রিয়তা, এটা আওয়ামী লীগের নেই।’
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খানসহ দলের সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবী।