দারোগারে ইচ্ছামতো দিছি, এসআইকে পিটিয়ে ওসিকে যুবলীগ নেতার ফোন
সুনামগঞ্জের শাল্লায় বহুল আলোচিত পুলিশের এসআই শাহ আলীকে পেটানোর পর ওসি’র সঙ্গে যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর মোবাইলে কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছে।
ওই অডিও রেকর্ডে অপুর মোবাইল থেকে করা কলে শাল্লা থানার ওসি নুর আলমের কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, ‘অপু দা। প্রতি উত্তরে অরিন্দম চৌধুরী অপুর কণ্ঠে বলতে শোনা যায়, জ্বি ভাই, কোন জায়গায় আছেন এখন?
ওসি বলেন, আমি এই যে রওয়ানা দিছি। তখন অপু বলেন, ‘কথা কইলাইন (বলে ফেলেন) তাইলে দাদার সাথে।’ তখন দাদা সম্বোধনকারী জনৈক ব্যক্তি ওসিকে বলেন, আদাব। ওসি বলেন, আদাব দাদা। জনৈক ব্যক্তি বলেন, আপনি যেটা বলছিলেন, ওই যে শাহিদ আলীর (শাল্লা সদরে অবস্থিত শাহিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়) পিছে আপনার দারোগারে মন-ইচ্ছামতো দিছি। ওসি বলেন, হুম।
জনৈক ব্যক্তি বলেন, ‘দুইজন লোক আসায় বাইচ্ছা গেছে। নাইলে জানে শেষ করে দিতাম। আমরার দিকে একটু খেয়াল করইন যে, আমরার যেন কোনো সমস্যা না হয়।’
অডিও ক্লিপের বক্তব্য অনুযায়ী ওসির নির্দেশেই এসআই শাহ আলীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফাঁস হওয়া রেকর্ডে কে ওই দাদা? এ ব্যাপারটি এখনো রহস্যাবৃত। তদন্ত করলে এর সত্যতা বের হবে বলে মনে করেন শাল্লার সচেতন মহল।
ফাঁস হওয়া ২৮ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপে শাল্লা থানার ওসি নূরে আলমের সঙ্গে কথা বলার সময় ঘটনা নিয়ে ওই যুবলীগ নেতা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন। এ ছাড়াও আরও ৩টি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যেগুলোতে ওই যুবলীগ নেতা কর্তৃক ওসিকে টাকা দেয়ার কথাও শোনা যায়।
ফাঁস হওয়া অন্য একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, অপু ওসিকে বলছেন, ‘ভাই কিছু খরচ পাঠাইছলাম পাইছইন নি?’ ওসি সম্মতিসূচক উত্তর দিলে অপু ওসিকে বলেন, ‘ভাই কালকে থানায় আপনার জন্য মিষ্টি নিয়ে আসবো।’
অডিও ক্লিপের বিষয়ে শাল্লা থানার ওসি নূরে আলম বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। এসব মিথ্যা। আমার কারও সঙ্গেই এমন কথাবার্তা হয়নি।’
এসআই শাহ আলী বলেন, অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এমনটি হয়ে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক।
ওসি নুরে আলমের সঙ্গে বিরোধ ছিল কিনা জানতে চাইলে শাহ আলী বলেন, একটা বিষয়ে মতবিরোধ ছিল। সেটা হলো ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কিত গোপনীয় প্রতিবেদন পাঠাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আসে। আমি থানা এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ও গণজরিপ করে ড. জয়া সেনগুপ্তা স্যারকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন স্যারকে দ্বিতীয় অবস্থান দেখিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করি। কিন্তু ওসি সাহেব আমাকে ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন নামে একজনকে সর্বাগ্রে রেখে প্রতিবেদন দিতে বলেন। আমি এমন মিথ্যা প্রতিবেদন দিতে রাজি হইনি। এ নিয়ে তিনি আমার ওপর মনঃক্ষুণ্ন ছিলেন।’
এদিকে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতার সঙ্গেও অপু’র মোবাইলে কথোপকথনের দুইটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। অডিও ক্লিপে অপুকে ওই কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা স্থানীয় রাজনীতি, সামপ্রদায়িকতা সম্পর্কিত বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে শোনা যায়। এ ছাড়া ওসি’র সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের বিষয়টি অপুকে অবহিত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, শাল্লায় গত ১২ই জুলাই রাতে যুবলীগ নেতা অপু বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের এসআই শাহ আলী গুরুতর আহত হন। রাতের আঁধারে শাল্লা থানা সংলগ্ন রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
এসআই শাহ আলী সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় যুবলীগ নেতা অরিন্দম চৌধুরী অপুর নেতৃত্বে তার বাহিনীর ৭-৮ জন লোক দা, লোহার রড, লোহার পাইপ নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলায় শাহ আলী গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার করতে থাকেন। তার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজনসহ থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা এসে আহত এসআইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
ঘটনার সময়ে ওসি নুরে আলম শাল্লার বাইরে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার পর শাল্লা থানা পুলিশ কথিত যুবলীগ নেতা নাইন্দা গ্রামের অরিন্দম চৌধুরী অপু, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও গ্রামের রতন দাসকে গ্রেপ্তার করে। গত ৮ই আগস্ট রোববার সুনামগঞ্জ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান যুবলীগ নেতা অপু।