খালেদা জিয়ার জামিন ইস্যু: এক দফা আন্দোলনের প্রস্তুতি বিএনপির

0

সমন্বয় করবেন কেন্দ্রের মধ্যম সারির নেতারা, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের সম্মতি * শুনানির আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি

খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে তৃণমূলের চাপে রয়েছে বিএনপি। আগামী বৃহস্পতিবার দলীয় চেয়ারপারসনের জামিন না হলে এক দফা আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না হাইকমান্ড। তবে জামিন শুনানির আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটি জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। এর পরপরই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে সারা দেশের জেলা ও মহানগর নেতাদের বার্তা দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচি সফল করতে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন্দ্রের মধ্যম সারির নেতাদের।

সূত্র জানায়, বিএনপির হাইকমান্ড ইতিমধ্যে সারা দেশের সাংগঠনিক জেলা শাখার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তৃণমূলের নেতারা হাইকমান্ডকে জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত না নিলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নিজ উদ্যোগে রাজপথে নেমে পড়বেন। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে স্থায়ী কমিটি।

স্থায়ী কমিটির এক নেতা শুক্রবার জানান, রাজপথের কর্মসূচি না দেয়ায় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নীতিনির্ধারকদের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সমালোচনা করা শুরু করেছেন। এ অবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়াই তৃণমূল নেতারা রাজপথে নামলে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ বলতে কিছুই থাকবে না- এমন শঙ্কায় সিদ্ধান্ত হয়েছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এক দফার আন্দোলনে যাবে বিএনপি।

প্রস্তুতি নিতে তৃণমূলে বার্তাও পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলের শরিকদেরও সমর্থন থাকবে। তবে আন্দোলনের ধরন কী হবে, তা স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা পান তাকে সেটুকুও দেয়া হয়নি। এ ধরনের মামলায় সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে জামিন হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। তার জামিনে পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে।

তার জামিন না দেয়াটা প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধেই শুধু নয়, অমানবিকও বটে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা না হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। তার চিকিৎসার ক্রমাবনতি ও চিকিৎসা না হওয়ার দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে। বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। আমরা অপেক্ষা করব। জামিন না হলে বৃহত্তর গণআন্দোলন সৃষ্টি করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে।

জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যদি দেখি বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি, তা হলে এ দেশে এক দফার আন্দোলন হবে। তা হবে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের আন্দোলন। তবে এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। দলীয় সূত্র জানায়, দলের করণীয় নিয়ে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে হাইকমান্ড যোগাযোগ করলে তারা দুটি প্রস্তাব দেন। এক. খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা নেতাদের একযোগে কারাবরণ।

দুই. এক দফা আন্দোলন, যা সফল করতে একযোগে সারা দেশের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামবেন। এ দুই প্রস্তাব নিয়ে নীতিনির্ধারকরা গত বুধ ও বৃহস্পতিবার গুলশান কার্যালয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। সেখানে তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন হাইকমান্ড। আন্দোলন সফল করতে মধ্যম সারির কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। তারা সারা দেশের জেলা, মহানগরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। আর বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সরাসরি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশনা দিচ্ছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, এক দফা আন্দোলন ছাড়া আর বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাবিহীন রেখে মৃত্যুর দিকে ঠিলে দেবে, তা জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। এখানে আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে।

কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া। তিনি কারাবন্দি হওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির নেতাদেরও তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। দল পরিচালিত হয়েছে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দেশে অবস্থানরত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির নেতাদের যৌথ নেতৃত্বে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com