করোনার ব্যর্থতা আড়াল করতে সরকার বিভিন্ন ‘নাটক’ করছে, অভিযোগ টুকু’র

করোনার ব্যর্থতা আড়াল করতে সরকার বিভিন্ন ‘নাটক’ করছে বলে অভিযোগ করেছে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। চিত্র নায়িকা পরীমনিসহ একজন প্রযোজকের বাসা থেকে বিদেশি মদসহ বিভিন্ন অবৈধ জিনিসপত্র উদ্ধারের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই অভিযোগ করেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির উদ্যোগে কোভিড-১৯ হেল্প সেন্টারের উদ্বোধন উপলক্ষে আজ এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন তবে তিনি তার নির্বাচনি এলাকার নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা দেয়া ছাড়া কোনো বক্তব্য রাখেননি। পরে মহাসচিবের উপস্থিতিতে প্রধান অতিথি হিসেবে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এই হেল্প সেন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, আপনারা যেটা বললেন, দেশে তো ওনারা (সরকার) অনেক নাটক করছে। সেই নাটকগুলো নিয়ে আমাদের সাংবাদিকদের ব্যস্ত রাখছে, টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ব্যস্ত আছে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যস্ত আছে। কার বাড়িতে কতগুলো মদ বেরুলো, কার বাড়িতে কতগুলো ইয়াবা টেবলেট বেরুলো। এই করোনার মধ্যে এই খবরটা পাইছি আরকি। এখন করোনা আসছে। মৃত্যুর সংখ্যার হার বেড়ে গেছে, করোনায় সংক্রমণ সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ মরছে। এগুলোকে পাশ কাটানোর জন্য এখন মদের বোতল, ইয়াবার বোতল, কি সব নামটাম শুননি কখনো এলএসডি-ফেলএসডি-কি সব আছে, এসব নিয়ে করছে। সেখানে বীরের মতো দাঁড়িয়ে আছে ছবি তুলে টেলিভিশনে দেখাচ্ছে।

টুকু বলেন, ঢাকা শহরে তারা (সরকার) এতো কিছু পারে। ইজরাইল থেকে যন্ত্র নিয়ে এসে সব দেখে- এগুলো শুধু বিএনপির জন্য। আর এসব লোক যে এইসব অসামাজিক কাজ করে বেড়ায় এতোদিন তাদের চোখে পড়ে নাই। এখন করোনা আসছে তাদের চোখে। করোনা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে দলের করোনা পর্যবেক্ষণ সেলের আহবায়ক বলেন, দেশের মানুষ যে আজকে করোনার জন্য হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছে না, মফস্বল থেকে আজকে ঢাকা শহরে লোক পাঠাচ্ছে সেদিকে সরকারের নজর নাই। আমার একটা এলাকা আছে, মহাসচিবের (বিএনপি) একটা এলাকা আছে। আমাদের জেলাগুলো থেকে লোক আসছে ভর্তি হওয়ার জন্য, প্রতিদিন আমাদেরকে ভর্তি করাতে হয় হসটপিটালে। জেলা হাসপাতালগুলোতে জায়গা নাই, অক্সিজেন সিলিন্ডার নাই। অক্সিজেন অল্প একটু লাগিয়ে আরেকজনকে নাকের সাথে লাগাচ্ছে। এভাবে দেশ চলতেছে, দেশ চালাচ্ছে তারা। এরকম পরিস্থিতিতে জেলা সদরে যে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়তা কেন্দ্রগুলো করছি- উদ্যোগটা ক্ষুদ্র হলেও এর ব্যাপকতা আছে। ঠাকুরগাঁওয়ের নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করবো আজকে যে হেল্প সেন্টার খোলা হয়েছে এটা কিন্তু একদিনের জন্য নয়। যত দিন করোনা থাকবে ততদিন এই সেন্টার চালিয়ে নিতে হবে। আমরা কেন্দ্র থেকে ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছি, ভবিষ্যতেও করব। তবে আপনাদেরকেও উদ্যোগ নিয়ে সহযোগিতার মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের রাজনীতি এখন একটাই যে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যাতে তারা বুঝে যে, বিএনপি আছে আমাদের পাশে।

তিনি বলেন, আমাদের দল ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যেদিন থেকে দেশে করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা পর্যবেক্ষণ কমিটি তৈরি করেছে এবং গতবছর জেলায় জেলায় আমরা মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছিয়েছি। গত বছর প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষের ঘরে ঘরে আমরা খাবার পৌঁছাতে পেরেছিলাম। আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্মীরা জেল-জুলুম-মামলা-মোকদ্দমা-নিপীড়ন-নির্যাতনের পরেও নিজের পকেট থেকে অর্থ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, খাবার যোগাড় করে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার ভেরিফাইড ফেইসবুকের ওয়ালে দেয়া পোস্টের বক্তব্য তুলে ধরে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, উনি ওনার পোস্টে আমাদেরকে বিবর্তনের শিক্ষাদান করেছেন। সেখানে উনি একটা ম্যাসেজ আমাদেরকে দিয়েছেন সেই ম্যাসেজটা সরকারের ম্যাসেজ- যে তোমরা মরে যাও। বিবর্তন হয়ে যাক। ২০ কোটি লোক আছে, তার মধ্যে ৪/৫/১০ লাখ লোক মরে গেলে কি আসে যায়? বিবর্তন তো। বিবর্তনে যেরকম বিলীন হয়ে যায় তোমরাও হয়ে যাও। ক্ষতি কার হবে? যাদের মারা যাবে, যাদের আত্মীয়-স্বজন থাকবে না তারা কষ্ট পারে। তাদের (সরকার) কী? তারা তো কাঁচের ঘরের মধ্যে বসে আছে, তাদের তো কোভিড হবে না, তারা মরবেও না। যে সরকারের এরকম একটা ধারণা সেই সরকার কখনো মানুষকে ভালোবাসতে পারে না। ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি তৈমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমিনের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সাংসদ জাহিদুর রহমান জাহিদ, স্থানীয় জেলা নেতা ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সুলতান উল ফেরদৌস চৌধুরী নম্র, মো. পয়গাম আলী, মো. জাফরুল্লাহ, অধ্যাপক আবদুল হামিদ, তারিখ আদনান, ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, সাধারণ সম্পাদক লুতফুর রহমান মিঠু প্রমুখ।