কেন আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছি না?: প্রশ্ন বিএনপির
কেন আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছি না? এমন প্রশ্ন দেখিয়ে, সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন আবদুল মঈন খান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘কেন আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। যদি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বই করি, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয় তাহলে কেন সবাই আমাদের শত্রু হয়ে গেল? পৃথিবীতে এমনই বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের সত্যিকার বন্ধু একটি রাষ্ট্র।পৃথিবীর দুই’শ রাষ্ট্রের মধ্যে একটি রাষ্ট্র আজকে আমাদের সত্যিকার বন্ধু–কথাটি সত্য। তাহলে আমার এই যে পররাষ্ট্র নীতি–সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, তা এই ৫০ বছরে আমাদের কী ফল দিলো?’
সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘চীন, ভারত এবং পশ্চিমা শক্তির কারণে এই রোহিঙ্গার সমস্যাটি একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমারকথা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গা সমস্যা আগেও দুই বার বাংলাদেশে এসেছিল। আমরা তো সেই সমস্যাটির সমাধান করেছি। এবার কেন পারছি না? এ রকম লাখ লাখ রোহিঙ্গা তো বাংলাদেশে ৭০ এর দশকের শেষদিকে এসেছিল, ১৯৯১ পরেও এসেছিল।’
‘আমরা মনে আছে, তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘে গিয়ে আমি সেখানে জাপানের ও চাইনিজ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিবের মধ্যস্থতায় সেই সমস্যাটির সমাধানে আমিও একজন অংশীদার ছিলাম এবং সমাধানও হয়েছিল। এবার কেন হলো না। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে পারছি না, একুল–ওকুল দুইকুল রাখতে গিয়ে কোনো কুলই রাখতে পারছি না। এটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ–অকল্যাণের যে প্রশ্নগুলো আমাদের মনে জাগে, আমরা তো শুনতে পারি। হয়ত উত্তর দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের বক্তব্য গণতন্ত্র পরে উন্নয়ন আগে– সেই নীতিতে আমরা একমত হইনি। সেই নীতিতে একমত হলে আমাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন রাষ্ট্র করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলাচল করবে। সেই কথাটি জোর দিয়ে আমরা এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সত্যে পরিণত করতে যদি না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন যা কিছুই বলুন সব কিছু অর্থহীন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে– আমরা বিশ্বকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে দেখতে চাই, একটি শান্তির পৃথিবী হিসেবে দেখতে চাই, দ্বন্দ্বের পরিহার করে, হিংসা পরিবার করে, ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দূর করে মানুষ যাতে সুন্দরএকটি জীবন–যাপন করতে পারে সেই পৃথিবী দেখতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে যেতে হলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যক।তার পাশাপাশি এটাও ভুলে গেলে চলবে না–আমরা কথা বলার স্বাধীনতা চাই, আমরা গণতন্ত্রও চাই।’
‘আমরা কী চাই, দেশের মানুষ কী চায়? গণতন্ত্র তো তাই। আমি গণতন্ত্র বলতে শুধু এটা বুঝি মানুষ যেটা চায় দেশের সরকারঠিক সেভাবে কাজ করবে–এটার নামই গণতন্ত্র এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ যেটা চায় সেটাই গণতন্ত্র। কিন্তু আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টাসীমাবদ্ধ হয়ে একটি দলের কাছে বন্দি–যারা কেবল আমি তার বাইরে কিছু চিনে না। এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশের মানুষ আত্মদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর দুইটা উদ্দেশ্য ছিল– একটি গণতন্ত্র অন্যটি এদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আজকে ৫০ বছর পরে এসে আমি প্রশ্ন করতে চাই এই দুইটির কোনটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। পাকিস্তানের ২২ ধনী পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করেছিলাম। আজকে বাংলাদেশে সরকার ২২’শ ধনীপরিবার সৃষ্টি করেছে। আর কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষা হয়েছে সেখানে আমি দেখেছি, বিশ্বের যে কয়টি দেশে ধনী–দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তার মধ্যে শীর্ষে হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা কী এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?
সাউথ এশিয়া ইউথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটির (এসএওয়াইপিপিএস) উদ্যোগে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) অথবা কোয়াড (কোয়াড্রাল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ) শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।