আ.লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না: ড. মঈন খান

0

ক্ষমতাসীন .লীগের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য . আবদুল মঈন খান।

তিনি বলেন, চীনভারত রেষারেষিতে সব কূল রক্ষা করতে গিয়ে কোনো কূলই রক্ষা করতে পারছে না সরকার।

আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি  এসব কথা বলেন।

সাউথ এশিয়া ইউথ ফর পিস এন্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি (এসএওয়াইপিপিএস)’’ একটি সংগঠনের উদ্যোগেবাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: বিআরআই(বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) অথবা কোয়াড(কোয়াড্রাল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।

.আবদুল মঈন খান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা আমরা কেনো সমাধান করতে পারছি না। যদি আমি সবার সঙ্গে বন্ধুত্বই করি, কারো সঙ্গে শুক্রতা নয় তাহলে কেনো সবাই আমাদের শত্রু হয়ে গেলো? আজকের পৃথিবীতে এমনই বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের সত্যিকার বন্ধু একটি রাষ্ট্র। পৃথিবীর দুইশ রাষ্ট্রের মধ্যে একটি রাষ্ট্র আজকে আমাদের সত্যিকার বন্ধুকথাটি সত্য।তাহলে আমার এই যে পররাষ্ট্র নীতিসবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়, তা এই ৫০ বছরে আমাদের কি ফল দিলো?

সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান বলেন, চীন, ভারত এবং পশ্চিমা শক্তির কারণে এই যে রোহিঙ্গার সমস্যাটি সেটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার কথা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গা সমস্যা আগেও দুই দুই বার বাংলাদেশে এসেছিলো। আমরা তো সেই সমস্যাটির সমাধান করেছি। এবার কেনো পারছি না? এরকম লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা তো বাংলাদেশে ৭০ এর দশকের শেষ দিকেএসেছিলো, এরকম লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা তো ১৯৯১ পরে এসেছিলো। আমরা মনে আছে, তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘের গিয়ে আমি সেখানে জাপানী চাইনিজ রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলোচনা করে জাতিসংঘের তৎকালীন যিনি মহাসচিব ছিলেন তার মধ্যস্থতায় সেই সমস্যাটির সমাধানে আমিও একজন ক্ষুদ্র অংশীদার ছিলাম এবং সমস্যার সমাধান হয়েছিলো।এবার কেনো হলো না। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে পারছি না, একুলওকুল দুইকুল রাখতে গিয়ে কোন কুলই রাখতে পারছিনাএটা আলোচনার বিষয় হতে পারে। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণঅকল্যাণের যে প্রশ্নগুলো আমাদের মনে জাগে, আমরা তো শুনতে পারি। হয়ত উত্তর দিতে পারি না।

গণতন্ত্রউন্নয়ন পাশাপাশি চলতে হবে বলে মন্তব্য করে আবদুল মঈন খান বলেন, আজকের সরকারের যে বক্তব্য গণতন্ত্র পরেউন্নয়ন আগেসেই নীতিতে তো আমরা একমত হইনি। সেই নীতিতে একমত হলে আমাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভিন্নরাষ্ট্র করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী গণতন্ত্র উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলাচল করবে। সেই কথাটি জোর দিয়ে আমরা এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সত্যে পরিণত করতে যদি না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন যা কিছুই বলুন সব কিছু অর্থহীন।

গণতন্ত্র প্রসঙ্গে আবদুল মঈন খান বলেন, আজকে বিশ্বের যে দৃষ্টি ভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছেআমরা বিশ্বকে একটি গ্লোভালভিলেজ হিসেবে দেখতে চাই, একটি শান্তির পৃথিবী হিসেবে দেখতে চাই, দ্বন্দ্ব পরিহার করে, হিংসা পরিবার করে, ধনী দরিদ্রের ব্যবধান দূর করে মানুষ যাতে সুন্দর একটি জীবনযাপন করতে পারে সেই পৃথিবী দেখতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে যেতে হলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। তার পাশাপাশি এটাও ভুলে গেলে চলবে নাআমরা কথা বলার স্বাধীনতা চাই, আমরা গণতন্ত্রও চাই। আমরা কী চাই, দেশের মানুষ কী চায়? গণতন্ত্র তো তাই। আমি গণতন্ত্র বলতে শুধু এটা বুঝি মানুষ যেটা চায়দেশের সরকার ঠিক সেই ভাবে কাজ করবেএটার নামই গণতন্ত্র এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ যেটা চায় সেটাই গণতন্ত্র।কিন্তু আজকে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ কুক্ষিগত হয়ে একটি দলের কাছে বন্দিযারা কেবল আমি তার বাইরে কিছু চিনে না। এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশের মানুষ আত্মদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর দুইটা উদ্দেশ্য ছিলোএকটি ছিলো গণতন্ত্র অন্যটি ছিলো এদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আজকে ৫০ বছর পরে এসে আমি প্রশ্ন করতে চাই এই দুইটির কোনটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। পাকিস্তানের ২২ ধনী পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করেছিলাম। আজকে বাংলাদেশে সরকার ২২ ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে। আর কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। সম্প্রতি একটি সমীক্ষা হয়েছে সেখানে আমি দেখেছিবিশ্বের যে কয়টি দেশে ধনীদরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে তার মধ্যে শীর্ষে হচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা কী এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?

এসএওয়াইপিপিএসের চেয়ারম্যান . সাজিদুল হকের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল আলোচনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান (অব) মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এবিএম শামসুদ্দোজা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com