৬ জুলাই: জয়নুল আবদিন ফারুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল সংসদ প্রাঙ্গণ

0

জয়নুল আবদিন ফারুক। বাংলাদেশের গত কয়েক দশকের রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায়, রাজপথের লড়াইসংগ্রাম আর আন্দোলনে এক পরিচিত নাম। বিএনপি তথা চার দলীয় জোট সরকারের সময়সহ বিভিন্ন মেয়াদে ধানের শীষ প্রতীকে বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া নোয়াখালীর এই সন্তান দেশের অন্যতম জনপ্রিয় তুখোড় রাজনীতিক ব্যক্তিত্বও।

তবে তার লড়াকু রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ২০১১ সালের জুলাই দিনটি ছিল সবচেয়ে বীভৎস বেদনাদায়ক। আজ থেকে ১০বছর আগে এই দিনেই সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে পুলিশের লাঠিপেটায় গুরুত্বর আহত হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। বিরোধীদলীয় সাংসদদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুনুর তার ওপর চড়াও হোন।

২০১১ সালের আজকের এই দিন সকাল ৬টার দিকে জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে বিরোধী দলের ১৫২০ জন সাংসদ মানিক মিয়া এভিনিউয়ের সামনে জড়ো হন। ভোরবেলা তারা হেঁটে সংসদ ভবন এলাকা থেকে ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছেন। পরেফার্মগেট থেকে তারা আবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ফিরে যান।

এসময় পুলিশের সঙ্গে জয়নুল আবদিনের কথা কাটাকাটি হয়।

সময় পুলিশ জয়নুল আবদিনের দিকে তেড়ে যায়। আরও কয়েকজন পুলিশ তার দিকে এগিয়ে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয় এবং তিনি পড়ে যান। পুলিশের কয়েকজন সদস্য তাকে লাথি মারেন এবং তাকে ধরে টানাহেচড়া করতে থাকেন। এসময় ফারুকের গেঞ্জি খুলে যায়। একপর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্যদের লাঠির আঘাতে তার মাথা ফেটে যায়। সকাল থেকে ফারুকের ডান হাতে ব্যান্ডেজ থাকলেও পরে ধস্তাধস্তির সময় সেটি খুলে যায়।

ফারুকের মাথায় রক্ত দেখে নারী সাংসদেরা তাকে নিয়ে ন্যাম ভবনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় পুলিশ আবার এগিয়ে এলে জয়নুল আবদিন আত্মরক্ষায় ন্যাম ভবনের দিকে দৌড় দেন। পুলিশও তার পিছু নিয়ে আবার সেখানে গিয়ে সাংসদদের ওপর হামলা চালায়। বেপরোয়া পুলিশ জয়নুল আবদিনকে চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান।

এরপরে সাংসদেরা ফারুককে উদ্ধার করে নারী সাংসদ পাপিয়া আশরাফির ন্যাম ভবনের বাসায় নিয়ে যান। এর কয়েক ঘণ্টা পরসকাল ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়।

১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন জয়নুল আবদিন ফারুক। নোয়াখালী ও নোয়াখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।

ধারাবাহিক ভাবে ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালে জুন মাসে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম ২০০৮ সালে নবমজাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলবিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মোট বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জয়নুল আবদিন ফারুক। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিরোধী দলের চিফ হুইপ নিযুক্ত হন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ২০১১ সালে ৪৮ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয় সংসদে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। হরতালের প্রথম দিন জুলাই সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হন ফারুক।

ঘটনায় ফারুককে মারধর হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজাম। ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দায়ের করা মামলায় ৩০ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। মামলার তদন্তকারীরা ফারুককে দোষারোপ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে মহানগর হাকিম আদালত মামলাটি বরখাস্ত করে দেন।

এরপর সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের করা নাশকতার অভিযোগে ২০১৩ সালের জুলাই গ্রেফতার হন ফারুক। এর ১০দিন পর ১৩ জুলাই ফারুককে মাসের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে বিদেশ গমনে কোনোরকম বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

২০১৫ সালে বিএনপির হরতালঅবরোধ চলাকালে নাশকতার অভিযোগে জয়নুল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে পৃথক ৬টি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৭ সালের জুলাই দুটি মামলায় তাকে জামিন দেয়া হয়। অপর চারটি মামলায় তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুর নাহার ইয়াসমিনের আদালত।২০১৭ সালের ১৮ জুলাই ওই চার মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ২০ জুলাই কেরাণীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হনফারুক।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা চালানোর সময় ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা নোয়াখালী আসনে(সেনবাগ) ধানের শীষের প্রার্থী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের গাড়িবহরে সরকার দলীয় রাহামলা চালায়। হামলায় ফারুক অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও সেনবাগ উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিএনপির অন্তত জন নেতা গুলিবিদ্ধ হন। ভাঙচুর করা হয় বহরে থাকা ৫টি গাড়ি ডজনখানের মোটর সাইকেল।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com