আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে জাতি হতাশ, বিক্ষুব্ধ: ফখরুল
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন শুনানি পিছিয়ে দেয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন ঠেকাতে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে- তা আদালতে জমা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দুইবারের বিরোধী দলীয় নেত্রী ৭৩ বছর বয়সী সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা খালেদা জিয়াকে প্রচলিত রীতি মেনে জামিন না দিয়ে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্তে আজকে জাতি শুধু হতাশই হয়নি, বিক্ষুব্ধও। দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতিতে গোটা জাতি আজকে উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তার মুক্তিটা অবশ্যই প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অত্যন্ত বিস্ময় এবং উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা পান তাকে সেটুকুও দেয়া হয়নি। এ ধরনের মামলায় সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে জামিন হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। তার জামিন পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে। তার জামিন না দেয়াটা প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধেই শুধু নয়, অমানবিকও বটে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপন না করে আদালত অবমাননা করেছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননা করেছেন বলে আমরা মনে করি।
তিনি বলেন, আনঅফিসিয়াল সূত্রের খবর অনুযায়ী বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা জমা দেয়া বন্ধ হয়েছে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের সঙ্গে পুরনো বোর্ডের প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্যের। গত ৩০ নভেম্বর বিএসএমএমইউয়ের চার চিকিৎসকের বোর্ডের প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। অতি দ্রুত পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন; প্রায় পঙ্গু হয়েই পড়েছেন। তিনি সাহায্য ছাড়া একেবারে চলতে পারেন না, বিছানা থেকেও উঠতে পারেন না। মারাত্মক স্বাস্থ্যের অবনতির পরও সরকার ক্রমাগত তার জামিনে বাধা দিচ্ছে।
‘খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন’- বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি আদালতের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল, আদালত অবমাননার শামিল। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার চায় না দেশনেত্রীর জামিন হোক। তিনি দেশনেত্রীকে ‘গডমাদার’ বলেছেন, বলেছেন ‘রাজার হালে’ আছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিএসএমএমইউকে ভয় দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি কাকতালীয় কিনা জানি না। একদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে, অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য। তার এ বক্তব্য ‘আদালতের ওপর থ্রেট’ বলে আমরা মনে করি। এটা ফ্যাসিজমের একটি চূড়ান্ত রূপ।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা না হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। তার চিকিৎসার ক্রমাবনতি ও চিকিৎসা না হওয়ার দায়দায়িত্ব এই সরকারপ্রধানকে বহন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অপেক্ষা করব। সাতদিনের কথা বলা হয়েছে। মুক্তি না দিলে কী করবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মুক্তি না দিলে স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ।