শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান বিএনপির
শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথ রুদ্ধ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১১ জুন) দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারনসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহবান জানান।
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের এই মহাদুর্যোগের মধ্যেও বাগাড়ম্বর বক্তব্য প্রদান ছাড়া সরকার জনকল্যাণে কোনও কাজ না করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর বেপরোয়া গতিতে জুলুম–নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী সরকার আরও বেশি আগ্রাসী পথঅবলম্বন করে বিরোধী দলকে দমন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে সরকারের এই ফ্যাসিবাদী নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি। এই প্রতিবাদ–বিক্ষোভ করতে গিয়েও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরকারের সাঁড়াশি আক্রমণে পড়তে হয়েছে। ২০২১ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং গ্রেফতারের জোরালো হিড়িক শুরু হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এর সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে গত ২৮ মার্চ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়, গত ১৩ এপ্রিল পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তার কারাবাস অন্যায় ভাবে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। আবারও তাকে নতুন মামলা মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডেনিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীকে গত ৫ বছরযাবৎ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মামলায় গ্রেফতার করে কারান্তরীণ রাখা হয়েছে। যখনই তিনি বলেন, আদালত থেকে জামিন লাভ করেন তখনই নতুন নতুন পুরনো বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাবাস দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জয়পুরহাট, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে প্রতিদিনই গ্রেফতার, কারান্তরীণ করা হচ্ছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। গত ২৬ মার্চ ২০২১থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২০০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের এই ক্রান্তিকালে দেশের মানুষের ভাল–মন্দ তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই সরকার বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম চালানোকে দৈনন্দিন কর্মসূচিতে পরিণত করেছে। লকডাউনের এই সুযোগে সরকার যেন ক্র্যাক ডাউন চালাচ্ছে। ভয়াবহ লকডাউনের মধ্যেও গ্রাম–শহর, পাড়া–মহল্লায়বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে। সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ যাতেমুখ খুলতে না পারে সেজন্যই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন চালানোকে লক্ষ্য হিসেবে ধরেনিয়েছে সরকার। নির্যাতন–নিপীড়ণ, গুম–খুন ইত্যাদি অপকর্মের মাধ্যমে দেশকে এক ভয়াবহ অরাজকতার দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে দেশকে তারা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক কাহিনি তৈরি করে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এইসরকারের নিষ্ঠুর থাবা থেকে অন্যান্য বিরোধী দল ও মতের মানুষরাও রেহাই পাচ্ছেন না। বর্তমান সরকার পরিকল্পিত ভাবে নিজেদের সৃষ্ট অনাচার এবং করোনার মহামারির অভিঘাতে তাদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপরজুলুম চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, এই সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। তাই দেশের ভয়াবহসংকটে বা জনগণের দুর্দশা লাঘবে তাদের কোনও উদ্যোগ নাই। তারা নিজেদের অনৈতিক শাসন টিকিয়ে রেখে দীর্ঘকাল ক্ষমতাভোগ করতেই দমন–নিপীড়নের স্টিম রোলার অব্যাহত রেখেছে।’
হেফাজতে ইসলাম বা তাদের কোন কর্মসূচির সাথে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোন সম্পর্ক না থাকলেও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলাতেও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম জড়িয়ে তাদেরকে গ্রেফতার ওহয়রানি করা হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি অবিলম্বে অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, লায়ন আসলাম চৌধুরীসহ দেশব্যাপী গ্রেফতারকৃত বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস–চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।