নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান বিএনপির
নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের জন্য দলকে ‘সর্বাত্মক’ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এখন আর সময় নাই। আগামী দিনের জন্য নিজেকে তৈরি করে ফেলেন। শক্ত হয়ে দাঁড়াই আমরা নিজেদের পায়ে, দাঁড়িয়ে আমরা জনগণকে আমাদের সঙ্গে নিয়ে আসি। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করি।’
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এমন আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দাবি একটাই– চলে যাও, চলে যাও, রেহাই দাও বাংলাদেশকে। আমাদের পরিস্কার কথা, অবিলম্বে পদত্যাগকরুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।তা হলে না হলেএই বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে তাদের অধিকার আদায় করতে হয় তারা তা জানে।
ক্ষমতাসীন অপকর্মের কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওদের একজন এমপি কিছুদিন আগে পার্লামেন্টে বলেছেন, বড় চোরদের চুরি দেখে ছোট চোররা এখন লজ্জা পাচ্ছে। বড় চোর হচ্ছে ওদের মন্ত্রী, বড় বড় নেতারা। করোনা মানুষের জীবন নিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনের প্রশ্ন, বাঁচার প্রশ্ন, মরার প্রশ্ন। সেখানেও তারা চুরি করছে। টেস্টে চুরি, মাস্কে চুরি, পিপিইতে চুরি, ডাক্তার–নার্সদের টাকা দেয়ার বেলা চুরি, আইসিইউ বেডে চুরি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল চুরি, একটা হাসপাতাল নাই, উধাও হয়েগেছে।
তিনি আরও বলেন, চিন্তা করতে পারেন? আবার নতুন করে একটা হাসপাতাল তৈরি করবে, আবার ওখানে চুরি করবে, আবারকমিশন নেবে। আর ওই টাকা পাঠাবে কানাডা, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। আমার কথা নয়, আপনারাই এখনবলতে শুরু করেছেন পার্লামেন্টে, বিভিন্ন জায়গায়.. এই যে অর্থ পাঁচার হচ্ছে–এটা ভয়াবহ। আমাদের অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, ৬ লক্ষ কোটি টাকা গত কয়েক বছরে দেশ থেকে পাঁচার হয়ে গেছে। এটাই আওয়ামী লীগ।
সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, চারিদিকে আপনাদের আশে–পাশে তাকিয়ে দেখবেন– আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী, বড় নেতা–ছোট নেতা–পাতি নেতা– সব আছে না। তাদের চলাফেরা, চাল–চলন দেখেছেন আপনি, নিশ্চয় দেখেন। রাতারাতি সব আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এদের হাতে যদি দেশ বেশি দিন থাকে এই দেশের অস্তিত্বথাকবে না, এদেশ টিকবে না। ছোট বেলা আমরা পড়তাম, গানও শুনেছি– ছেলে ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে। এইসেই বর্গী এরা।
তিনি আরও বলেন, এদের ভয়ে সব পালিয়ে যাচ্ছে এখন। কাউকে কোনো কথা বলতে দেবে না। কথা বললেই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট। আর বেশি কথা বললে আমাদের নিপুণ রায় চৌধুরীর মতো একটা মিথ্যা অডিও ক্লিপ তৈরি করে তারেক নাশকতার মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এরকম নজির অসংখ্য। সাংবাদিক ভাইয়ের কিছু শক্ত করেলেখতে পারে না। আমি তাদের দোষারোপ করি না, বরংঞ্চ সহমর্মীতা প্রকাশ করি। কারণ লিখলে তো জেল, লিখলেই তোমামলা, লিখলেই তো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, মেরেও ফেলতেছে, হত্যাও করতেছে।
জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শ দলের নেতা–কর্মীদের জন্য ‘গর্ব’ উল্লেখ করে তা অনুসরণ করার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের সঞ্চালনায় আলোচনায় সভায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ–সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ঢাকা দক্ষিন সিটি করপোরেশনের গতনির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, মহানগর দক্ষিণের সহ সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ মহানগরের নেতারা বক্তব্য রাখেন।