প্রতিটি যুগান্তকারী কাজের মধ্য দিয়েই শহীদ জিয়া স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, উদ্দেশ্যমূলক ও সুক্ষভাবে নানারকম ইস্যু তৈরী করে
সমাজের সর্বস্তরে মানুষে মানুষে বিরোধ–বিভাজন তৈরী করে মানুষের ঐক্য বিনষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিকরা আজ পরাধীন।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা সকলে বাংলাদেশী। এই মাটি আমাদের, এই মাটি থেকেই আমাদের অনুপ্রেরণা আহরণ করতে হবে। জাতিকে শক্তিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য। ঐক, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও কঠোর মেহনতের মাধ্যমেই তাসম্ভব।’
স্বাধীনতার ঘোষকের ৪০ তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ২৯ মে শনিবার বিএনপি আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায়দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তাই এবার আরেকটি যুদ্ধের শপথ নিতে হবে। এবারের যুদ্ধ স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ, এবারের যুদ্ধ মাফিয়ামুক্ত দেশ গড়ার যুদ্ধ, এ যুদ্ধে আমাদের শ্লোগান দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীনচৌধুরীর পরিচালনায় সভায় দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেন। সভায় বিএনপির জেলা–উপজেলার নেতারা এবংদলের অঙ্গসংগঠনের নেতারাও যুক্ত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষককে হত্যা ছিল ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পরাজিত অপশক্তির সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ। বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর এই গর্বিত সময়ে দেখতে হচ্ছে সীমান্তে ফেলানীকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে কাঁটাতারে। যেন ঝুলছে অসহায় বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশকে আজ এতটাই অসহায় করে ফেলা হয়েছে দেশের মর্যাদার পক্ষে কথা বলায় স্বাধীন বাংলাদেশে বেড়ে ওঠা কতিপয় কুলাঙ্গার আবরারদের মতো দেশ প্রেমিককে পিটিয়ে হত্যা করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তারেক রহমান বলেন, পরদেশের স্বার্থ রক্ষায় নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করার মতো স্বদেশী খুনি যখন তৈরী হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে আবরার হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে চলমান যে নির্মম বাস্তবতা, এটি হচ্ছে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সেই পরাজিতঅপশক্তির ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের–ই কুফল।
তারেক রহমান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব, এমন একজন নেতৃত্ব, যার পেশাগতকিংবা আর্থ–সামাজিক–রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি কর্ম প্রতিটি পদক্ষেপ বিএনপির তথা জাতীয়তাবাদী শক্তিরপ্রতিটি নেতা–কর্মী গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে পারেন, অনুসরণ করতে পারেন ।
তারেক রহমান বলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ জিয়া আগন্তুক কোনো ব্যক্তি নন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে, আধুনিক বাংলাদেশের ইতিহাসে শহীদ জিয়া একটি অনিবার্য নাম। শহীদ জিয়ার গৌরবগাঁথা আলোচনায় র্যাব–পুলিশের হুমকি ধামকি কিংবা আদালতের রায়ের দোহাই দেয়ার প্রয়োজন হয়না।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম সাধীনতা বার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত স্বাধীনতার ঘোষক জিয়ার লিখিত ‘একটি জাতিরজন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধটিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দলিল উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই তরুণ জিয়া মন ও মননে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করেছিলেন। স্বাধীনতার জন্য নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত রেখেছিলেন। শুধু ছিলেন সময়ের অপেক্ষায়।
‘একটি জাতির জন্ম’ শীর্ষক নিবন্ধে শহীদ জিয়া লিখেছেন, ‘সেই স্কুল জীবন থেকেই মনে মনে আমার একটি আকাঙ্খাই লালিত হতো, যদি কখনো দিন আসে তাহলে এই পাকিস্তানবাদের অস্তিত্বেই আমি আঘাত হানবো। সযত্নে এই ভাবনাটাকেই আমি লালন করতাম। অপেক্ষায় ছিলাম উপযুক্ত সময় আর উপযুক্ত স্থানের’ ।
তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই দেখা যায় দেশে বিদেশে সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য উপায়ে ১৯৭১ সালের ২৬মার্চের প্রথম প্রহরেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে জিয়াউর রহমানকে কোনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হয়নি। স্বাধীনতার ঘোষণায় কোনো রকমের জড়তা ছিলোনা।
স্বাধীনতার ঘোষককে জানতে হলে, মানতে হলে, বুঝতে হলে অন্য কারো বিরোধিতা কিংবা কারো সঙ্গে তুলনা করার প্রয়োজন নেই। বরং প্রতিটি যুগান্তকারী কাজের মধ্য দিয়েই শহীদ জিয়া স্ব–মহিমায় উজ্জ্বল, বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে শহীদ জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল তূর্যধ্বনির মত।
আবার ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সময় স্বাধীনতার ঘোষকের নেতৃত্বেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ তাই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির কাছে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির কাছে জিয়াউর রহমান একটি সাহসের নাম জাতীয়তাবাদী শক্তিরকাছে
জিয়াউর রহমান মানেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো বলেন, দেশ আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। দেশে সবচেয়ে ভুলুন্ঠিত মানবিক মর্যাদা। সবচেয়ে অবহেলিত বিবেকবোধ সম্পন্ন গণতন্ত্রকামী মানুষ। গণতন্ত্র নির্বাসিত। গুম–খুন–অপহরণ এখন সাধারণ বিষয়ে পরিণত করে ফেলা হয়েছে। দেশে চলছে পুলিশী রাজ। পুলিশ এখন সেনাবাহিনীকে নিয়েও রং–তামাশা করছে। পার্লামেন্ট এখনযেন স্রেফ নাট্যশালা। বিচারালয়কে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি বিভাগে পরিণত করা হয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতিলুটপাট এখন ওপেন সিক্রেট।
মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে দেশপ্রেমিক মানুষের ঐক্যের প্রতীক উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে আওয়ামী লিগ ক্ষমতার মেয়াদ হয়তো কয়েক বছর দীর্ঘায়িত করেছে। কিন্তু কয়েকযুগ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।দেশ আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে মাফিয়া চক্র অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী জনগণ।
তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে হানাদাররা যেভাবে রাতের অন্ধকারে স্বাধীনতাকামী মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেছিল হত্যা করেছিল একইভাবে স্বাধীন বাংলাদেশেও এখন আওয়ামী হানাদারবাহিনী গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাতের অন্ধকারে তুলেনিয়ে গিয়ে গুম–অপহরণ করছে, হত্যা করছে। লাঞ্চিত করছে, অপমান করছে।
সভায় আরো বক্তব্য বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদটুকু। এছাড়াও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, এম এ কাইয়ুম, ঢাকা জেলার ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগরের ডা. শাহাদাত হোসেন, দক্ষিণের মোস্তাক আহমেদ খান, বরিশাল দক্ষিণের এবায়দুল হক চাঁন, রাজশাহী মহানগরের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, খুলনা জেলার শফিকুল আলম মনা, রংপুর মহানগরের সাইফুল ইসলাম, ময়মনসিংহ উত্তরের অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণের ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, যশোরের অধ্যাপক নার্গিস বেগম, কুমিল্লা দক্ষিণের হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, উত্তরের আখতারুজ্জামান সরকার, ফেনীর শেখ ফরিদবাহার, হবিগঞ্জের জি কে গউস, সুনামগঞ্জের কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন, কক্সবাজারের শাহজাহান চৌধুরী, ফরিদপুরের সৈয়দ মোদারেস আলী ইছা, নওগাঁয়ের হাফিজুর রহমান, ঠাকুরগাঁওয়ের তৈমুর রহমান বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবন–কর্মের ওপরে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকারমোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বক্তব্য রাখেন।