আওয়ামী লীগ সরকার ব্লেইম গেইমে লিপ্ত: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত একযুগে দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের
ধর্মীয় উপাসনালয়ে, বাড়িঘরে অসংখ্য হামলা হয়েছে। একটি ঘটনার কি বিচার হয়েছে ? ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার বিচার
এতো বছরেও কেন হলোনা? কেন হচ্ছেনা ? এর কারণ, বাংলাদেশে সংঘটিত এ ধরণের প্রতিটি সংঘর্ষে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ জড়িত। এ কারণেই কোনো একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে গতকাল বুধবার (২৬ মে) বিএনপি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান প্রশ্ন করে বলেন বলেন, প্রতিটি ঘটনার পরই দেখা যায় ক্ষমতাসীনরা ঘটনার বিচার না করে ব্লেইম গেইমে লিপ্তহয়। জনগণ জানতে চায়, সরকার যদি নিজেরাই ব্লেইম গেইমে লিপ্ত হয় তাহলে বিচারটা করবে কে? বিচার করার দায়িত্ব কার?
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সহ–ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান। সুভাষ চন্দ্র চাকমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীসহ অনেকে।
তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লিগ শুরু থেকেই পবিত্র ধর্মকে নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে সমাজে হিংসা–বিদ্বেষ–অস্থিরতা জিইয়ে রাখছে। নানা কৌশলে সম্প্রদায়ে–সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস সৃষ্টি এবং বিভাজনের বীজ জিইয়ে রাখছে। দেশের জনগণ সাক্ষী,
দেশে শরিয়া আইন কায়েম করা হবে, দেশ চলবে মদিনা সনদে, শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আওয়ামী লিগ প্রকাশ্যেই এসবকথা বলে
ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে। দেশে আলেম ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঙ্গে ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে ।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শেখ হাসিনার ধোকাবাজিতে প্রলুব্ধ ও প্রতারিত হয়ে একশ্রেণীর আলেম ওলামা তাকেকথিত ‘কওমি জননী’ খেতাব দিয়েছে। এখন আবার আলেম–ওলামাদেরকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে না পেরে তাদেরকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করছে।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনুভূতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সম্পর্কে জনগণ এখন সচেতন। এ ক্ষেত্রে বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট, বিএনপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চায়না, ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়না।
বিএনপি বিশ্বাস করে দল–মত–ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি–অবাঙালি, বিশ্বাসী–অবিশ্বাসী সবাই রাষ্ট্রেসকল ক্ষেত্রে সমানাধিকার ভোগ করবে। এটাই বিএনপি’র নীতি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজে সবার সময় মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি’র যুগান্তকারী রাজনৈতিক দর্শন
‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ । বাংলাদেশে একাধিকবার বিএনপি সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। বারবার এটি প্রমাণিত হয়েছেএকমাত্র বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনই দেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীর নিবিড় সহাবস্থান নিশ্চিত করতেপারে।
তারেক রহমান বলেন, যে সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং হীন দলীয় স্বার্থে বিভাজনের রাজনীতি করে তাদের দ্বারা রাষ্ট্র ওসমাজের কল্যাণ হয়নি, হচ্ছেনা হতে পারেনা। তিনি বলেন, যে সমাজে নারী–শিশু– এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সম্প্রদায় অবহেলিত, অপমানিত, সেই সমাজ কখনো উন্নত সমাজ হতে পারেনা, সভ্য সমাজ হতে পারেনা।
তিনি বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতা হলো, মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, গণতন্ত্র হত্যা করে পুলিশী রাজ কায়েম করে, ক্ষমতাসীন অপশক্তি দেশে সর্বক্ষেত্রে বিকৃতির জন্ম দিয়েছে। ধর্মীয়–সামাজিক–মানবিক রাজনৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি ধর্মই মানুষের কল্যাণের কথা বলে, সাম্য ও সম্প্রীতির কথা বলে, মানবিকতার কথা বলে, মানুষের অধিকারের কথা বলে। ফলে একটি রাষ্ট্র ও সমাজে যাতে প্রতিটি নাগরিক প্রত্যেকেই যে যার ধর্মীয় রীতি নীতি ও অধিকার বিনাবাধায়–স্বাধীনভাবে অনুসরণ–অনুকরণ ও ভোগ করতে পারে এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ প্রত্যেকের দায়িত্ব। এমনএকটি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যেই মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু সবাই মিলে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল।
তিনি প্রশ্ন করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিল, সাম্য–মানবিক মর্যাদা–সামাজিক ন্যায় বিচার। কিন্তু এর একটি–ও কি এখন দেশে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে?
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ন্যায় বিচার’ এখন আইন মন্ত্রনালয়ের ফাইল বন্দি। আর মানবিক মর্যাদা নির্ভর করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীকিংবা র্যাব–পুলিশের মেজাজ মর্জির ওপর।
মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, এ অবস্থা আর চলতে পারেনা, চলতে দেয়া যায়না।তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থে দল–মত–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে একটি মাফিয়ামুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়েরদাবি। নাগরিক হিসেবে এটি সবার নৈতিক–সামাজিক–রাজনৈতিক দায়িত্ব।
অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে বুদ্ধ পূর্ণিমার শুভেচ্ছা জানান।অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া। অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা গৌতম চক্রবর্তী, অমলেন্দু দাশ অপু, জন গোমেজ, মনিষ দেওয়ান, সুশীলবড়ুয়া, সনত তালুকদার, অধ্যাপক জয়ন্ত বড়ুয়া, পার্থপ্রতিম বড়ুয়া, সহ অনেকে।