দেশে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেই গুমের অধ্যায় শুরু হয়েছে: তারেক রহমান
গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষে
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণী দিয়েছেন–
বাণীতে তারেক রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম আইন অনুযায়ী– কোন ব্যক্তিকে গুম করা একটি মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ। স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো সমাজের মধ্যে ত্রাস ছড়িয়ে দিতে এই ভয়াবহ অপরাধটি করে থাকে।বাংলাদেশেও গুমের ঘটনা গুলোর সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকবৃন্দ। এছাড়াও গুমের শিকার হয়েছে দেশের ভিন্নমতাবলম্বী, ব্যবসায়ী, লেখক, কবি, সাংবাদিক, কার্টুনিষ্ট, মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক নেতা, কুটনীতিক এবং সাধারণ মানুষও। চলমান কোভিড–১৯ এর এই চরম দুঃসময়েও গুম করার কার্যক্রম থেমে নেই।
তিনি বলেন, গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহে আমি এই গুম হওয়া মানুষদের অসহায় পরিবারের সাথেসংহতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিএনপি বরাবরই এই ধরণের অমানবিক গুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ সরকার বরাবরই গুমের ঘটনাগুলো সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে অস্বীকারকরে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমান অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলেই গুমের অধ্যায় শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালেজাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটিতে বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেদন দিয়ে গুমের ঘটনা অস্বীকার করলেও ওই কমিটির সমাপ্তিপর্যবেক্ষণে সাদা পোশাকে গ্রেফতার এবং গুম করা বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করতে সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলি তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং আর্থিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্তহচ্ছে। তারা নিয়মিতভাবে সরকার দ্বারা বিভিন্ন হুমকি এবং হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছে। অনেক মামলায় গুমের শিকার ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন ধরে আটক ও নির্যাতনের পর পুলিশে সোপর্দ এবং বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগে তাদের কারাগারে প্রেরণ করাহয়েছে। জবাবদিহিতার অভাবে কোনও বিচারিক প্রতিকার না পেয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার ও স্বজনরা ক্ষোভ এবং হতাশায় রাজপথে নেমেছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (এইচআরসি) সদস্য পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগে বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার সুরক্ষার অঙ্গীকারনামা জমা দিয়েছিল। ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) এর সময় জাতিসংঘের সদস্য দেশ সমূহের গৃহীত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য সরকার এইচআরসিকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতিও পুনরায় নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সেই সকল অঙ্গিকার ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ– সমালোচনাকে অগ্রাহ্য করে সরকার গুম, হত্যাসহ ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল – বিএনপি‘র পক্ষ থেকে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে অনুরোধ করছি– তারা যেন বাংলাদেশ সরকারকে গুমের ঘটনা বন্ধ করতে এবং গুমের শিকার সকলের ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অসহায় পরিবারকে সহায়তা করার জন্যআমি সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। একইসাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার ওপেশাজীবী সংগঠন এবং সকল নাগরিককে সরকারের গুম সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ারও আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়াও তিনি সরকারকে অবিলম্বে সকল নাগরিককে গুম হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়া সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন(আইসিপিপিইডি) স্বাক্ষর এবং ২০১৯ সালে গুমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত জাতিসংঘের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবেবলেও জানান।
উল্লেখ্যঃ প্রতি বছরের মতো এবছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পালিত হচ্ছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ।