খালেদা জিয়ার জামিনে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ: মির্জা ফখরুল
খোদ সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছে বিএনপি। বিচারচলাকালীন মামলা ও বিবাদীর বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আদালত অবমাননা করেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি আদালতের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। বিচারচলাকালীন মামলায় নগ্ন হস্তক্ষেপ করে প্রধানমন্ত্রী আদালত অবমাননা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকার চান না দেশনেত্রীর (খালেদা জিয়া) জামিন হোক।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে ‘সন্ত্রাসের গডমাদার’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, ‘তিনি রাজার হালে আছেন’। এর মাধ্যমে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে ভয় দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’
খালেদা জিয়ার জামিনে পদে পদে বাধার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত বিস্ময় ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা পান, তাকে সে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়নি। এ ধরনের মামলায় সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে জামিন হয়। কিন্তু তার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। খালেদা জিয়ার জামিনে পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে। তার জামিন না দেয়াটা প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধেই শুধু নয়, অমানবিকও বটে।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন আজ আদালতে উপস্থাপন না করার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননা করেছেন বলে আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, ‘আনঅফিসিয়াল সূত্রের খবর, গত রাতে রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে এটা আজ জমা দেয়া হয়নি।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিষয়টি কাকতালীয় কি-না জানিনা। একদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে, অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য। তার এই বক্তব্য ও এই ঘটনায় আদালতের ওপর থ্রেট (হুমকি) করা হয়েছে বলে মনে করি। এটা ফ্যাসিবাদের একটি রূপ। তারা ভয় দেখাতে চায়।’
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি ৭ দিন পিছিয়ে দেয়ায় এবং তার আইনজীবীদের মৌখিক আবেদন গ্রহণ না করায় সমগ্র জাতি শুধু হতাশই নয়, বিক্ষুব্ধও হয়েছে বলে মন্তব্য করেন দলটির মহাসচিব। খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানি পেছানোর ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা না হলে তার মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। তার চিকিৎসার ক্রমাবনতি ও চিকিৎসা না হওয়ার দায়-দায়িত্ব এই সরকার প্রধানকে বহন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।