জো বাইডেন রক্তাক্ত ইতিহাস রচনা করছেন: এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জো বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনি রক্তাক্ত হাত দিয়ে ইতিহাস রচনা করছেন। আমরা আর বসে থাকতে পারি না, আমাদের কথা বলতে বাধ্য করেছেন।’
সোমবার (১৭ মে) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোয়ান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন।
ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেনের সমালোচনা করে এরদোয়ান বলেন, ‘ইসরায়েলের পক্ষে অস্ত্র অনুমোদনের বিষয়ে আমরা আজ বাইডেনের স্বাক্ষর দেখেছি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৮ লাখ ৫০ হাজার অস্ত্র অনুমোদন দিয়েছে। অথচ তারা নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিপ্রিয় ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, গাজাকে মারাত্মকভাবে আক্রমণ এবং শতশত ব্যক্তির শহীদ হওয়ার ঘটনা সত্যিই দুর্ভাগ্য জনক।এভাবে চলতে পারে না। মুসলিম দেশগুলোকে এক না হলে তারা আরও বর্বর আচরণ করবে। আমাদের এক হওয়ার সময়এসেছে।
তিনি বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আজ আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, আমরা জেরুজালেম পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা এটি চালিয়ে যাব। জেরুজালেমে যন্ত্রণা ও রক্তে রঞ্জিত, আপনি সমর্থন করে যাছেন, যেটা ঠিক হচ্ছে না আপনার।
তিনি বলেন, ইহুদীরা শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বয়স্ক মানুষকে খুন করছে। অসহায়রাও কোনো ভাবে ছাড়পাচ্ছে না। করোনাকালে এসব ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। দুর্ভাগ্য ক্রমে অনেকে তাদের সমর্থনও করছেন দেখছি।বিষয়টিতে আমি খুবই মর্মাহত। এছাড়া তিনি অস্ট্রিয়ার অফিসিয়াল বিল্ডিংয়ে ইসরায়েলি পতাকা উড়ানোর জন্য নিন্দা জানান।
এরদোয়ান বলেন, অস্ট্রিয়া ইহুদীদের দিয়ে মুসলমানদের গণহত্যার জন্য চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। সেখানে এভাবে পতাকা উড়ানো কোনো ভাবেই সমর্থন করা যায় না।
তুরস্ক ও সাইপ্রাসের মতো কুদুসতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুইটি রাষ্ট্র হতে পারে। এরদোগান যোগ করেন, তিন ধর্মের প্রতিনিধিদের কমিশন দ্বারা জেরুজালেম শাসন করা হবে ‘সবচেয়ে ধারাবাহিক উপায়’।
উল্লেখ্য, মার্কিন গণমাধ্যমের ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, গাজায় হামলার আগে ৫ মে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন ও তেল আবিব প্রশাসনের মধ্যে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্রের চুক্তি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কংগ্রেস সদস্যের বক্তব্যের ভিত্তিতে তারা এই তথ্য প্রকাশ করে।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউসের এক লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রকেট আক্রমণের মুখে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন জো বাইডেন।
এ বিষয়ে গতকাল এরদোগান বলেন, রকেট হামলায় কয়জন মারা গেছেন, তা তো বুঝতে পারছি না। একটি সূত্রে জানা গেছে বেশির ভাগ রকেট ইসরাইল তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তথা আয়রন ড্রোনের মাধ্যমে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
‘অন্যদিকে আকাশ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থার ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক সংকেত সাইরেন বেঁজে উঠার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সরায়েলিরা বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়, তাই তাদের এখন পর্যন্ত ১০ জনের বাইরে তেমন কোনো হতাহতের দৃশ্য চোখে পড়ছে না।’
এরদোয়ান পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে কথা বলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রয়োজনীয় নিষেধাজ্ঞায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি না দিলে ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা অব্যাহত রাখবে বলে উল্লেখ করেনতিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ২১টি দেশের নেতা ও সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। কথাবলা অব্যাহত রয়েছে।জেরুজালেমে হামলা করা মানে গোটা মুসলিম বিশ্বের উপর হামলা করা। পবিত্র শহর জেরুজালেমের সম্মান, মর্যাদা, গুরুত্ব এবং পবিত্রতা রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
ইসরায়েল কয়েকদিন ধরে বায়ু, স্থল এবং সমুদ্র থেকে গাজায় বোমা বর্ষণ করছে। ১০ মে থেকে হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২১৬ এ দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬১ জনেরও বেশি শিশু এবং ৩৬ জননের বেশি নারী রয়েছে। ১৪০০ এর বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক যুদ্ধ বিমানগুলো প্রতি রাতেই গাজার বিভিন্ন স্থানে বহু পয়েন্টে বোমা নিক্ষেপ করছে।
ওআইসি ও জাতিসংঘ প্রধানের হামলা বন্ধ ও যুদ্ধ বিরতি আহ্বানের পরও ইসরায়েল আমেরিকাসহ কিছু দেশের প্রশয়ে ফিলিস্তিনি নিরীহ মানুষের উপর বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু আমেরিকার ভেটোর কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখন পর্যন্তযৌথ বিবৃতি দিতে পারেনি। মানবতা আজ নীরবে কাঁদছে।