আপিল বিভাগে বিএনপির আইনজীবীদের অবস্থান, বিচার কার্যক্রম বন্ধ
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি এগিয়ে আনার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ কারণে বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন না দিয়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুনানি মূলতবি করেন আদালত। এই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সবশেষ প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। এর প্রতিবাদ জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা আজই শুনানি করার আবেদন জানান এবং খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে অন্তবর্তী জামিন দেয়ার দাবি জানিয়ে চিৎকার করেন। এর প্রতিবাদ জানান রাষ্ট্রপক্ষ।
দুপক্ষের আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোলে লিখিত আদেশ না দিয়েই এজলাস ছেড়ে চলে যান প্রধান বিচারপতিসহ ৬ বিচারপতির বেঞ্চ।
এরপর জামিন শুনানি এগিয়ে আনার দাবিতে বিএনপিপন্থী শতাধিক আইনজীবী আপিল বিভাগে অবস্থান নেন। তারা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষ অবরুদ্ধ করে রাখেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে রয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আইনজীবী সমিতির সভাপতি আইনউদ্দিন, বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ শতাধিক আইনজীবী। ওই কক্ষ অবরোধ করে বিএনপির জুনিয়র আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জিয়ার জামিন দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
এজলাজে অবস্থান নেয়া খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এ বিষয়ে বলেন, আইনজীবীরা আদালতের আদেশে সন্তুষ্ট না। এজন্য তারা আদালতে অবস্থান করছেন। আমরা সিনিয়ররা বললেও জুনিয়র আইনজীবীরা শুনছেন না।
তিনি বলেন, যতক্ষণ আইনজীবীরা আছেন, ততক্ষণ থাকব। বারবার শুনানি এগিয়ে আনার আর্জি জানালেও আদালত তা আমলে নেননি। বরং অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাকি আছে, সেগুলো করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন এবং শুনানির জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত আগামী ১১ ডিসেম্বর মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল এবং শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ অন্যরা আজকের মধ্যেই শুনানি করার দাবি জানান। এ সময় দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে চরম উচ্চবাচ্য শুরু হয়। জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, আগে তার জামিন দেন, প্রয়োজনে শুনানি পরে হোক। তিনি খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তী জামিন প্রার্থনা করেন। এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
তখন আদালত জানান আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। এর পর বিএনপির আইনজীবীরা কোর্টে হট্টগোল শুরু করেন।
কয়েক মিনিট ধরে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলার পর আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতিসহ ছয় বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় চলে যান। এ সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শেইম শেইম বলে চিৎকার করতে থাকেন।
কোর্ট উঠে চলে গেলেও আইনজীবীরা কেউ কারও জায়গা ছাড়েননি, যে যার জায়গায় বসে আছেন। তারা জামিন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার কথা বলছেন। দুপক্ষের আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বন্ধ রয়েছে বিচারিক কাজ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগীর হোসেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী।
এর আগে এ মামলার শুনানির সময় গত ২৮ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে তার বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আজকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ডকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ দিনই আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন আদালত। সেই পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখা হয়। সেই মোতাবেক আজ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল।
খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনের শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মমতাজউদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।
খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় গত ১৪ নভেম্বর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় জামিন আবেদনটি আপিল বিভাগে কার্যতালিকাভুক্ত হয়।
৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এর পর ১৪ নভেম্বর সাতটি গ্রাউন্ডে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ১৭ নভেম্বর আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ২৫ নভেম্বর শুনানির পর বিচারক সেটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রায়ের পর ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন খালেদা জিয়া।