সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতির শিকার: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দলটির চেয়ারপারসন ওসাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে সরকার অনুমতি না দেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের ‘প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতি’র শিকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে বসুন্ধরার গেটে গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ওয়ান–ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে– এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সম্মতি না দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। শুধু মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণেও অনুমতি দেওয়া জরুরি ছিল। কারণ, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। স্বাধীনতা থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর যে অবদান তা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। দুর্ভাগ্য, সরকার তাদের প্রতিহিংসা মূলক রাজনীতি চরিতার্থ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘উদ্দেশ্য হলো, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যে ধারাতে সাজা স্থগিত করেছে। ওই ধারাতে বিদেশে যেতে এবং দণ্ড মওকুফ করার সুযোগ আইনে রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কোনো নজির নেই। সরকার অসংখ্য নজির সৃষ্টি করেছে। তাঁরা ফাঁসির আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতেপারেন, মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার জন্য কোনো মানবতা, শিষ্ঠাচার ও মূল্যবোধ তাদের কাজ করে না। খালেদা জিয়া রাজনীতির শিকার হচ্ছেন। এখানেও পার্টির তরফ থেকে তাঁর বিদেশ চিকিৎসার আবেদন জানাই।’
সরকারের সিদ্ধান্তে বিএনপি হতাশ এবং ক্ষুব্ধ বলেও উল্লেখ করেন দলের মহাসচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাঁকে (খালেদা জিয়া) যে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, খালেদাজিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এটা ওয়ান–ইলেভেন থেকে শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁকে এবং তাঁরদলের সব শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দেশে প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পুরো দলকেইরাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত চলছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চক্রান্ত চলছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কারণ, তিনি হচ্ছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।এই দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক। ফ্যাসিস্ট সরকার, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই–আন্দোলন শুরু করেছেন। গত নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় তাঁকে অন্তরীণ করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তাঁর সুচিকিৎসা করা হয়নি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বহুবার সরকারকে বলেছি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার গিয়েছিতাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হলেও তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। এবং যখন দেশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে তখন পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে। এটা তাঁর জন্য বেশি উপকার হয়নি।’
খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ আমি তাঁকে দূর থেকে দেখে এসেছি। আগের থেকে ভালো মনে হলো। অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস–প্রশ্বাস নিচ্ছেন। ফুসফুসে টিউব লাগানো আছে। উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানকার চিকিৎসকরাই বলেছেন, এই চিকিৎসা তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়।করোনা পরবর্তী যে জটিলতা দেখা দিচ্ছে, তাতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ তাঁর পুরানো রোগ ও বয়সের কারণে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।’