জাকাতের সর্বোত্তম প্রতিদান ও ধনীদের করণীয়
জান্নাত চায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর জান্নাতের অবস্থান যদি হয় কোনো ফোয়ারা সংলগ্ন; তবে তো কথাইনেই। আল্লাহ তাআলা জাকাত আদায়কারী ব্যক্তিদের জন্য এমনই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা জান্নাতের ফোয়ারা সংলগ্ন স্থানে থাকবে। আর তারাই মুত্তাকি। জাকাত দেওয়ার মাধ্যমেই তারা একদিকে হবে মুত্তাকি আর পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের ফোয়ারার কাছে স্থান পাবে।
কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে জাকাত দেওয়া ব্যক্তিদের মুত্তাকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে আবার তাদের পুরস্কারের কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন–
– ‘মুত্তাকিরা জান্নাতের ফোয়ারার কাছে থাকবে। তাদের পালনকর্তা তাদের যা দেবেন তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তারাছিল (আমলে সালেহ) নেক কাজে অংশ গ্রহণকারী, তারা রাতের সামান্য অংশেই ঘুমায় আর শেষ রাতে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেএবং তাদের ধন–সম্পদে ছিল প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক বা ন্যায্য অধিকার।‘ (সুরা জারিয়াত : আয়াত ১৫–১৯)
– ‘তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী, যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে এবং যাদের ধন–সম্পদে নির্ধারিতহক আছে প্রার্থী (সাহায্য প্রার্থী) ও বঞ্চিতের এবং যারা প্রতিফল দিবসকে সত্য বলে বিশ্বাস করে এবং যারা তাদের পালনকর্তার শাস্তি সম্পর্কে ভীত–কম্পিত।‘ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ২২–২৭)
জাকাতের উত্তম প্রতিদান পাওয়ার একটি বিশেষ উপায় হলো– জাকাত দেয়ার সময় উত্তম সম্পদ দিয়ে জাকাত দেয়া। তা হতেপারে উত্তম আচরণ। আর দানের ক্ষেত্রে ভালোবাসা ও পছন্দের জিনিস দান করার কথা বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা– ‘তোমরা কখনো প্রকৃত কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা তা ব্যয় করবে, যা তোমরা ভালোবাস। আর তোমরা যেবস্তুই ব্যয় কর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত।’ (সুরা আল–ইমরান : আয়াত ৯২)
দান বা জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি সর্বোত্তম জিনিস ব্যবহার করা না হয় তবে পরকালে তার দান অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া হবেবলেছেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে–
হজরত আউফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে আমাদের কাছে এলেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। আমাদের এক ব্যক্তি মসজিদে নিকৃষ্ট মানের একগুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ওই খেজুরগুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেন– এর (খেজুরের) দানকারী ইচ্ছা করলে এর চেয়েও উত্তম (খেজুর) দান করতে পারত। তিনি আরও বলেন– এর (খেজুরের) দানকারীকে কেয়ামতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।’ (আবু দাউদ)
জান্নাতে সর্বোত্তম প্রতিদান পেতে হলে যেমন উত্তম জিনিস দিয়ে জাকাত ও দান–অনুদান দেওয়া জরুরি তেমনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা গরিব–অসহায়ের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। আর যারা লোক দেখানোর জন্য কিংবা ফটোশেসন করার জন্য অথবা বাহবা পাওয়ার জন্য জাকাত বা দান–অনুদান দেবে, পরকালে তাদের জন্য কোনো অংশই অবশিষ্ট থাকবে না। হাদিসেপাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেন–
আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে (আমলকরতে) তাদের কাছে যাও। দেখ, তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমাদ)
সর্বোপরি কথা হলো– জাকাত এমন এক আর্থিক ইবাদত, যার বিনিময়ে মহান আল্লাহ বান্দাকে দান করবেন জান্নাত। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘আপনি আমাকে এমন একটি কাজ সম্পর্কে অবহিত করুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বলেন–
‘তার কী হয়েছে? তার কী হয়েছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বললেন, তার বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তুমিআল্লাহর ইবাদত করবে, জাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখবে।‘ (বুখারি)
সুতরাং ধনী ও সম্পদের মালিকদের উচিত–
নিজেদের সম্পদকে স্বচ্ছ রাখতে এবং জাহান্নামের আজব থেকে বেঁচে জান্নাতের ফোয়ারার সন্নিকটে স্থান পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জনে জাকাত দেওয়া। নিজ উদ্যোগে জাকাত পাওয়ার যোগ্য গরিব–অসহায় ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে জাকাতের অর্থ পৌঁছে দেওয়া। কিংবা যারা যথাযথ ভাবে জাকাতের অর্থ বণ্টন করে তাদের কাছে নিজ নিজ জাকাতের অর্থ পৌঁছে দেওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদের মালিক ও ধনী ব্যক্তিদের যথাযথভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দানকরুন। কুরআন–সুন্নায় ঘোষিত জাকাতের সর্বোত্তম প্রতিদান পাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।