খালেদা জিয়াকে ‘মানবিক কারণে’ হলেও বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান ফখরুলের
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কোভিড–১৯ পরবর্তী নানা জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় ‘মানবিক কারণে’ তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার কোভিড–১৯ পরবর্তী যেটাকে পোস্ট কোভিড জটিলতা হয়, সেই জটিলতায় কিন্তু মাঝে মাঝে টার্ননেয় বিভিন্ন দিকে। উনার (খালেদা জিয়া) যে বয়স, উনার যে বিভিন্ন রোগ আছে, এর আগে উনি যে প্রায় তিন বছর কারাগারে ছিলেন, এখনও তিনি অন্তরীণই আছেন। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁর যেসমস্ত জটিলতা হয়েছে, তাতে দেশের বেশিরভাগ মানুষের আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছা যে, তার চিকিৎসাটা উন্নত কোনও হাসপাতালে হওয়া উচিত। বাংলাদেশে উন্নত হাসপাতালেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিদেশে আরও উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব কিনা, সেটাই মানুষের প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, গতকাল তাঁর পরিবার থেকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য যে অনুমতি দরকার সেই অনুমতি চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার মানবিক কারণে দেশনেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন এবং দেশের১৮ কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিসার অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২৭তারিখ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁকে এখানে সর্বপ্রকার চিকিৎসা দেয়াহচ্ছে এবং আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা করছেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে সুস্থ দেখতে চায়।’
বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে পৌঁছে দেন। এরপর সেই আবেদনপত্র যায়আইন মন্ত্রণালয়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে করা আবেদন যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।আবেদনের গুরুত্ব বিবেচনা করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।’
কর্মসূচি:
খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা সারা দেশে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার পবিত্র জামাতুল বিদা দিন আছে। সারা দেশে সমস্ত মসজিদ, বিভিন্ন প্রার্থনালয় যেগুলো আছে অন্যান্য ধর্মের সেগুলোতে আমাদের সমস্ত ইউনিটগুলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠান করবেন, প্রার্থনা সভা করবেন। আমি সকল ইউনিটের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করছি, তারা যেন জনগণকে নিয়ে দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন।’
এসময় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা এবং ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের ‘দুর্নীতি’র কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে নিহত দলীয় নেতাকর্মীদেরপরিবারকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে মহানগরবিএনপির ১০ জন নেতাকর্মীর পরিবারকে ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত সারা দেশে ৪২৫ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন বলে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।
কেন্দ্রীয় দফতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, যুব দলের এসএম জাহাঙ্গীর,ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর উদযাপন উপকমিটির নেতা আতিকুর রহমান রুমন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।