রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতেই লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন দিয়েছে সরকার: ফখরুল

শ্রমিক, মেহনতি ও খেটে খাওয়া মানুষের কথা না ভেবে, তাদের জন্য কোনও ধরনের ব্যবস্থা না করে শুধুমাত্র ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল’ করতেই সরকার লকডাউন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এমন অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এ ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।

তিনি বলেন, ‘আজকে পরিবহন শ্রমিকরা আন্দোলনে গেছে, যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। এই সরকার খেটে খাওয়া মানু্ষের জন্য, যারা দিন আনে দিন খায় তাদের জন্য কিংবা শ্রমিকদের জন্য কোনও ব্যবস্থা না করেই শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতেই লকডাউনের নামে দেশে ক্র্যাকডাউন দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তারা (সরকার) আজকে বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ওপর আক্রমণ করেতাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরই গ্রেফতার করছে। আজকে সমস্ত জাতি জিম্মি হয়েগেছে।’

এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শ্রমিকশ্রেণি ও তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এটাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে আমি বিশ্বাস করি যেটা সবচেয়ে বেশি কার্যকারী হবে সেটা হচ্ছে তরুণ–যুবক এবং শ্রমিক শ্রেণির মাধ্যমে। তাদের একতাবদ্ধ হতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গতকাল মাওয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটের যে দুঘর্টনা ঘটেছে, ২৭ জন নিহত হয়েছেন। সরকারের যেকোনও ব্যবস্থাপনা নেই এই দুর্ঘটনা তার একটা কারণ। স্পিডবোট চালু করেছে ঠিক আছে, কিন্তু স্পিডবোটের লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই।’

তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার লকডাউন দিয়েছে, কোথাও কোনও লকডাউন নেই। গণপরিবহন চালু করা হচ্ছে। কিন্তু আন্তঃজেলা পরিবহন হবে না, শুধুমাত্র জেলার মধ্যে থাকতে হবে। এগুলো থেকে বোঝা যায়, কতটা দায়িত্বহীন, কতটা অযোগ্য এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকার শুধুমাত্র নিজেদের দুর্নীতির জন্য…। আজকে লুটপাটের পাহাড় গড়ে তুলেছে আওয়ামীলীগের লোক ও তাদের মদদপুষ্ঠ আমলারা।’

‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনারা সবাই শুনেছেন জেনেছেন, গতকাল তাঁর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় সিসিইউতে নেয়া হয়েছিলো। তিনি এখনও সিসিইউতে আছেন, তাকে অক্সিজেন দেয়াহচ্ছে। এখন উনি স্থিতিশীল আছেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাঁর পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে ডাক্তাররা অত্যন্ত আশাবাদী তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আমরা দোয়া চাইছি মহান করুণাময় আল্লাহ তালার কাছে, সমগ্র জাতি আজকে প্রার্থনা করছেন– যিনি এদেশের স্বাধীনতার শেষ আশ্রয়স্থল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি যেন অতিদ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেন।’

‘শ্রমিকদের জন্য সরকারের প্রণোদনা নেই’- অভিযোগ করে এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনার মধ্যে আজকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন আমাদের শ্রমিক ভাই–বোনেরা। করোনার যে প্রণোদনা সরকার ঘোষণা করেছে সেই প্রণোদনার মধ্যে কিন্তু শ্রমিকদের জন্য কোনও বরাদ্ধ সেভাবে রাখা হয়নি, সুনির্দিষ্ট ভাবেও কোনও বরাদ্ধ রাখা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘যা কিছু প্রণোদনা দেয়া হয়েছে মালিক শ্রেণিকে দেয়া হয়েছে এবং সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারিরা এবং আওয়ামীলীগের যারা দোসর তারা নিজেরা নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা বারবার বলেছি, তুলে ধরেছি যে, করোনা কালে যাদের বেশি প্রয়োজন যারা দিন আনে দিন খায়, যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করে, যারা ছোট–ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাজ করে তাদের সবার আগে সহযোগিতা করতে হবে। আমরা বলেছিলাম কমপক্ষে তিন মাসের এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।’