হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
গণতন্ত্রের মানসপুত্র, উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৬৩ সালের এই দিনে লেবাননের বৈরুতে একটি হোটেলে নিঃসঙ্গ অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই নেতা।
রাজধানীতে হাইকোর্টের পাশে তিন নেতার মাজারে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সমাধি। তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এছাড়া তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালির যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল, সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার ফল ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট এবং অবিস্মরণীয় বিজয়। গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন, তাই সুধী সমাজে তিনি ‘গণতন্ত্রের মানসপুত্র’ বলে আখ্যায়িত হন। শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের শান্তিপ্রিয় গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি মুসলিম লীগ সরকারের একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেন। কেবল একজন রাজনৈতিক নেতাই নন, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কও। তার প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হয়।
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিচারপতি স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দীর কনিষ্ঠ সন্তান।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাণীতে বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও কর্ম আগামী প্রজন্মকে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনা ও জনগণের সার্বিক কল্যাণে উদ্বুদ্ধ করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এবং মানুষের কল্যাণ সাধনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জীবন ও আদর্শ আমাদের সর্বদা অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আজ সকাল ৮টায় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করা হবে। বরেণ্য এ রাজনীতিবিদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল এক বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সর্ব স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
জাতীয় পার্টি-জেপির বিবৃতি ও কর্মসূচি: স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৫৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম।
বিবৃতিতে জেপির নেতৃদ্বয় বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন। তার শাসনামল গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে রেখে গেছেন। তিনি নিজেই বলতেন ‘গণতন্ত্রই আমার জীবনের মূলমন্ত্র’। তিনি তার কর্মে ও রাজনীতিতে সেটির বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
জেপি নেতৃদ্বয় মরহুম নেতার আদর্শকে ধারণ করার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং জেল-জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন। তার সামগ্রিক জীবনে কখনো নীতির প্রশ্নে আপস করেননি এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে তিনি বিশ্বাস করতেন না। তিনি আমাদের দেশের সব মানুষের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ। একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমেই মরহুম নেতার স্মৃতির প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা যায়। গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই মহান সাধক চিরকাল এ দেশের মানুষের মাঝে অমলিন হয়ে থাকবেন। নেতৃদ্বয় মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষ্যে জাতীয় পার্টি-জেপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আজ সকাল ৮টায় মরহুমের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হবে। জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের সকাল পৌনে ৮টায় মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মাজার প্রাঙ্গণে সমবেত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।