চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন: নুরুল ইসলাম বিএসসি আলোচনার শীর্ষে

0

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী- এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৩ জানুয়ারি এ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্ধারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ত্যাগী কাউকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি জোটের শরিক দল জাসদকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে প্রয়াত মঈন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা বাদলের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা ও নুরুল ইসলাম বিএসসির বড় ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি মুজিবুর রহমান, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের সুজনসহ অনেকেই রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায়। তারা নানাভাবে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন।

২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার এ আসনে ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেছিলেন জাসদের কার্যকরী সভাপতি ও মহাজোট প্রার্থী মঈন উদ্দীন খান বাদল। তবে এবার মহাজোট নয়, নিজ দল থেকেই প্রার্থী চায় আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী হিসেবে উপনির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকেই দেখতে চান এখানকার অধিকাংশ ভোটার। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে নুরুল ইসলাম বিএসসির উজ্জ্বল ভাবমূর্তি রয়েছে। এ কারণে তিনিই এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসন থেকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি। বিএনপির প্রার্থী শামসুল আলমকে ৩৫ হাজারেরও বেশি ভোটে হারিয়ে তিনি জয়লাভ করেন। প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতাকে মন্ত্রিসভায় রাখা হবে- এমনটি আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাখা হয়নি।

২০১৪ সালে মহাজোটের স্বার্থে কেন্দ্রের অনুরোধে এ আসনটি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুকে ছেড়ে দিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেন। তবে এ মেয়াদের মাঝামাঝিতে এসে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে টেকনোক্রেট কোটায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী করা হয়। সূত্র জানায়, বিএসসি মন্ত্রী থাকাকালীন সাফল্য দেখান।

মালয়েশিয়া, দুবাই, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের বন্ধ থাকা শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। বাংলাদেশের জন্য শ্রীলংকা, আফ্রিকান দেশ- সি-শেল, মরিশাসসহ কয়েকটি দেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে চুক্তি সম্পাদন করেন। অস্ট্রেলিয়ায় শ্রমশক্তি রফতানিরও প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি।

সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নগরীর যে গুরুত্বপূর্ণ আসনটি উদ্ধার করেছিলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি, সেই আসনটি মহাজোটের স্বার্থে একবার বাবলুকে, দলের স্বার্থে একবার নওফেলকে ছেড়ে দেন। এই ত্যাগের কারণে এ আসনটিতে উপনির্বাচনে নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মনোনয়ন দেয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ আসনেই নুরুল ইসলাম বিএসসির বাড়ি। এখানে তিনি গড়ে তুলেছেন অন্তত ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তার বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে।

২০০৮ সালে নিজে কোতোয়ালি আসনে নির্বাচন করলেও একই সময়ে চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে মহাজোটের বাদলের জন্য কর্মী বাহিনী ও অর্থবিত্ত দিয়ে সর্বাত্মকভাবে কাজ করেন নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার পরিবার। যদিও নুরুল ইসলাম বিএসসি মনোনয়ন পেতে আগ্রহী কি না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরকে অভিমানের সুরে তিনি বলেন, আমি কিছু বলব না।

এ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন চাইছেন। তিনি এর আগে দু’দফা পটিয়া আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ। চউক চেয়ারম্যান থাকাকালে ফ্লাইওভার নির্মাণ, দুর্ঘটনা, আবাসন প্রকল্প গড়ে না তোলাসহ নানা কারণে বিতর্কিত হন। এ আসন থেকে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ। নতুন মুখ হিসেবে তিনি মনোনয়ন চাইছেন। নোমান আল মাহমুদ বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি রাজনীতি করছেন। এখন নবীন ও নতুন মুখ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে মঈন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী প্রয়াত স্বামীর এ আসনটিতে নির্বাচন করতে চান। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে স্বামীর স্মৃতি ধরে রাখতেই তিনি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে। গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনের এমপি জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল মারা গেলে এ আসনটি শূন্য হয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com