খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ পঙ্গুত্বের আশঙ্কা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে দাবি করেছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নেতারা। বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের এ সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেছেন, খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে তিনি কারও সাহায্য ছাড়া চলাফেরা-খাওয়া, এমনকি শরীরের তীব্র ব্যথার কারণে ভালোভাবে ঘুমাতেও পারছেন না।
যে কোনো সময় স্থায়ী পঙ্গুত্বের আশঙ্কা করছি। আমরা আশা করি মাননীয় আদালত তাকে তার প্রাপ্য জামিন দিয়ে মুক্ত পরিবেশে পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবেন। অন্যথায় চিকিৎসক সমাজ নীরবে বসে থাকবে না। আপামর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন গড়ে তুলবে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ডা. শামীম বলেন, ১/১১ সরকারের একটি ভিত্তিহীন মামলায় আদালতের রায়ে বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাবন্দি আছেন। একই সময়ে একইরকম মামলা যা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নামেও ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং অন্যরাও অধিকাংশ জামিনে আছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, খালেদা জিয়া তার স্বাভাবিক আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে এই চিকিৎসক বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রেমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছেন। তিনি জেলখানায় সঠিক চিকিৎসা এবং স্বাভাবিক পরিবেশ না পাওয়ায় রোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। জটিলতার কারণে তার হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টগুলোসহ শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। যার কারণে জয়েন্টগুলো শক্ত ও বাঁকা হতে চলেছে. যা কিনা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে।
ডা. শামীম বলেন, গত সোমবার ডাক্তাররা খালেদা জিয়ার ওজন মাপতে বারবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তীব্র ব্যথায় তিনি বিছানা থেকে নামতে পারেননি। তাছাড়া তিনি ব্যথার কারণে ঘুমাতেও পারছেন না ভালোভাবে। ভয়ংকর ব্যাপার হল, উনার ডান পায়ে একটি গুটি উঠেছে, যাকে মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় রিউমেটিক নোডিউল বলে, যা স্পর্শ করা মাত্রই তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। যেটি পরবর্তীকালে ভাস্কুলাইটিস উইকসেভ গ্যাংগ্রিনে পরিণত হতে পারে।
ডা. শামীম বলেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে নিজ পায়ে হেঁটে জেলখানায় প্রবেশ করেন, নিজে হেঁটে দোতলায় তার নির্ধারিত রুমে যান। এমনকি জেলখানা থেকে এর আগেরবার যখন বিএসএমএমইউতে আসেন তখনও গাড়ি থেকে নেমে নিজে লিফট পর্যন্ত হেঁটে যান। সময়ের পরিক্রমায় তিনি কিভাবে আজকের অবস্থায় উপনীত হলেন? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সঠিক চিকিৎসার অভাবে তিনি ধীরে ধীরে এ অবস্থায় উপনীত হয়েছেন।
তিনি সুচিকিৎসা পেলে এ অবস্থা হতো না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বিনা চিকিৎসায় আপনি অমানবিক কষ্ট দিচ্ছেন। তার প্রতি এই নিষ্ঠুরতা বিশ্বের স্বৈরশাসকরা যে আচরণ করে সেই আচরণেরই সমতুল্য। জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আঁচ করতে পারছেন না বলেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্তি না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা ড্যাবের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি, জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আগেই দেশনেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। নইলে খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায়ভার সম্পূর্ণরূপে সরকারের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও সরকারকেই বহন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. আবদুস সেলিম, ড্যাবের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি ডা. মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।